
শিক্ষার্থীর তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের আসন সংখ্যা সীমিত। এ সীমিত আসনেও ভাগ বসাচ্ছেন নকল আইডি কার্ডধারীরা। ফলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ গ্রন্থাগারে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে জানার পরও নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আসন রয়েছে দেড় হাজারের মতো। কিন্তু গ্রন্থাগারে পড়ার জন্য প্রতিদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সমাগম হয়। ফলে আসন নিশ্চিত করতে হয় রীতিমতো যুদ্ধজয় করে। সাধারণত সকাল ৮টায় গ্রন্থাগার খোলা হলেও সেখানে প্রবেশের জন্য ভোর ৬টা থেকেই দেখা যায় ব্যাগের দীর্ঘ লাইন হয়। এ ব্যাগগুলো রেখে যান শিক্ষার্থীরা। যারা গ্রন্থাগারের গেট খোলার আগে নিজেদের ব্যাগের জায়গায় এসে দাঁড়ান।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান শান্ত কালবেলাকে বলেন, আমাদের গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ। এখানে নিরিবিলি পরিবেশে পড়াশোনা করা যায়। কিন্তু পড়ার জন্য আসন রাখা রীতিমতো একটি যুদ্ধ। আসনের জন্য প্রতিদিনই সকাল ৬টায় লাইন ধরতে হয়। অনেকে ফজরের নামাজের সময় এসেও লাইনে ব্যাগ রেখে যায়। চাকরির পরীক্ষার সময় এ সংকট আরও বাড়ে। এ সময় অনেককে রাত ১২টায়ও ব্যাগ রেখে যেতে দেখা যায়। এদিকে আসন সংকটের মধ্যে গ্রন্থাগারে বেড়েছে নকল আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থীদের বিচরণ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে যারা পড়াশোনা করতে আসেন তাদের অধিকাংশই চাকরিপ্রার্থী। যেহেতু চাকরিপ্রার্থীরা একই ধরনের বই পড়েন সেহেতু কোন শিক্ষার্থী বহিরাগত এবং কে ঢাবির তা চিহ্নিত করা দুঃসাধ্য। শুধু ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নয়, সায়েন্স লাইব্রেরি ও হলের রিডিং রুমেও একই অবস্থা।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক বহিরাগত শিক্ষার্থী ঢাবির শিক্ষার্থীদের সহায়তায় নীলক্ষেত থেকে গ্রন্থাগারে প্রবেশের নকল আইডি কার্ড বানিয়ে নিচ্ছেন। এ কারণে প্রশাসন অভিযান চালালেও অনেক বহিরাগতকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আবার গ্রন্থাগারে বহিরাগতদের আনাগোনা রয়েছে এমন তথ্য থাকার পরও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে।
এ বিষয়ে টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জালাল আহমদ কালবেলাকে বলেন, কয়েক বছর ধরে বহিরাগত ও সাবেক শিক্ষার্থীদের দখলে চলে গেছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও সায়েন্স লাইব্রেরি।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিসিএস বা বড় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেই গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীর চাপ বাড়ে। এ সময় বাইরের কোনো শিক্ষার্থী ধরা পড়লেও তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি টিম গ্রন্থাগারে অভিযান চালিয়ে সাতজন বহিরাগতকে আটক করে।
অভিযান চালানো শিক্ষার্থীদের একজন হাফিজুর রহমান ফাহিম। তিনি বলেন, অনেক বহিরাগত শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে এসে আসন দখল করেন। এতে প্রকৃত শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রশাসন এসব বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। এসব কারণে আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী এক হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে অবৈধভাবে আসন দখল করা বহিরাগতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করি। এদের অনেকেই নীলক্ষেত থেকে গ্রন্থাগারে প্রবেশের কার্ড বানিয়ে নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. নাসিরউদ্দিন মুন্সী কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীর তুলনায় আমাদের লাইব্রেরির আসন সংখ্যা অনেক কম। এখানে যারা পড়াশোনা করে তাদের একাংশ আমাদের সাবেক ছাত্র। বহিরাগত খুব বেশি থাকে না। দু-একজন যারা পড়ে তাদের পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই।