স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে জরুরি প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ

কালবেলা।
কালবেলা।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক ফারজানা নাজনীন টুলটুল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। অনলাইন পত্রিকা পড়ার ক্ষেত্রে তিনি নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন। তিনি বলেন, নিউজগুলো অনলাইনে ‘ই-পেপার নামে ইমেজ’ আকারে থাকে। এ কারণে আমরা তা পড়তে পারি না। নিউজগুলো যদি লিংক আকারে থাকত তাহলে পড়তে পারতাম। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা কিবোর্ড কমান্ড দিয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করেন। তারা মাউস ব্যবহার করতে পারেন না।

ফারজানার মতো অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পত্রিকা পড়তে পারেন না। তাই তাদের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অভিগম্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। এতে তাদের চিন্তার দ্বার উন্মোচন হবে।

আজ বিশ্ব প্রবেশগম্যতা সচেতন দিবস। প্রতিবছর মে মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি উদযাপন করা হয়। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হবে। কারণ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধী বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।

দিবসটির মূল লক্ষ্য হলো—অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অভিগম্যতার ব্যাপারে সকলকে সচেতন করা। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা এক বিলিয়নেরও বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি প্রতিবন্ধী। সবার মতো সবক্ষেত্রে প্রবেশের অধিকার তাদেরও রয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে তারা যেন ডিজিটাল (ওয়েব, সফটওয়্যার, মোবাইল) জগতে প্রবেশ করতে পারে সেই সুযোগ করে দিতে হবে। দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীবান্ধব ওয়েব, মোবাইল অ্যাপ, এবং ডিজিটাল সেবাসমূহ সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারবেন। এ ছাড়াও, সেবা প্রদানকারী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজ নিজ ডিজিটাল সেবা অভিগম্য করার বিষয়ে সচেতন হবে এবং উৎসাহ পাবে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং অ্যাক্সেসিবিলিটি বাস্তবায়নে কাজ করছে এটুআই-এর ডিজেবিলিটি ইনোভেশন ল্যাব। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট ভাস্কর ভট্টাচার্য কালবেলাকে জানান, বাংলাদেশে অনেক অনলাইন সংবাদপত্র রয়েছে। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের পড়ার উপযোগী করার মতো কাজ তেমন হয়নি। সংবাদপত্রগুলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে স্কিন রিডিং সফটওয়্যার (বাংলা ও ইংরেজি), স্মার্ট ফোনের জন্য টপস ব্যাগ লাগবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি পত্রিকা এই উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় প্রবেশগম্যতা নির্দেশনাবলী তৈরি করা হয়েছে। অনলাইন সংবাদপত্রগুলো যাতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়ার উপযোগী করা হয় সেজন্য এটুআই থেকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাজমা আরা বেগম পপি বলেন, অনলাইন পত্রিকাগুলোর ওয়েবসাইটের ডিজাইন করার সময় অ্যাপসগুলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি হয় না। গাইড লাইন মেনে করলে এ সমস্যা হতো না। দু-একটি অনলাইন পত্রিকা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কথা ভেবে সফটওয়্যার ডেভেলপ করায় মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে পড়তে পারি।

এ বিষয়ে এটুআই প্রকল্প পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর কালবেলাকে বলেন, যে কোনো পত্রিকা বা ডিজিটাল সেবা ৩-৪টি ফর্মে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পোর্টাল বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করা হয়। অনলাইন পত্রিকা কোনো না কোনো ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইট ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্মত মানদণ্ড রয়েছে। এখানে প্রবেশগম্যতার জন্য কয়েকটি আইকন থাকতে হয়। সব পোর্টালে মতামত দেওয়া, চোখে না দেখেও কানে শুনতে পারার ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় পোর্টাল bangladesh.gov.bd রয়েছে। এখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো দেশের সব নাগরিক যেন ডিজিটাল সেবার আওতায় আসে। নিরক্ষর বা প্রতিবন্ধী—কেউ যেন এর থেকে বাদ না যায়। আমরা সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যাংকগুলোতে প্রবেশগম্যতার ব্যবস্থা হয়েছে। অনলাইন পত্রিকাগুলোতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতা বাড়াতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে এ সব সেবায় প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com