
আট বছর আগে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ভাঙচুর ও অগ্নিসন্ত্রাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আগামী দিনেও এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সারা দেশে পুলিশকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার পুলিশের ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ নির্দেশনা দেন।
সভায় আইজিপিসহ পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, র্যাবপ্রধান, এসবিপ্রধান, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশের প্রতিটি ইউনিটের প্রধান এবং জেলা পুলিশ সুপাররা ছিলেন। এতে গত তিন মাসে দেশে সংঘটিত অপরাধ ও মামলা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা নির্দেশনা দেন।
গতকাল সকালে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ অডিটোরিয়ামে দুই দিনব্যাপী ওই সভা শুরু হয়েছে। দিনের প্রথম ভাগের দুই অধিবেশনে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সভাপতিত্ব করেন। সন্ধ্যায় শেষ অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, পুলিশ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলাজনিত যে কোনো চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করছে। আগামীতেও আপনাদের সামনে আরও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যদের নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ওই অধিবেশনে পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পুলিশ ২০১৩ ও ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। আগামী দিনেও আইনশৃঙ্খলাজনিত যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে সকালের প্রথম অধিবেশনে পুলিশপ্রধান থানাকে ‘সার্ভিস ডেলিভারি সেন্টার’ হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। থানায় জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিতে পুলিশ সদস্যদের আরও সচেষ্ট হতে হবে।
পুলিশপ্রধান বলেন, জঙ্গি দমনে পুলিশের অনেক সাফল্য থাকলেও জঙ্গিরা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, তারা অনলাইনেও সক্রিয়। তাই জঙ্গি দমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাইবার পেট্রলিং জোরদার করতে হবে।
কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করেন পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। আগামী ঈদুল আজহাও নিরাপদে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করতে এখন থেকেই কার্যক্রম নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. আতিকুল ইসলাম জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিন মাসে ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, জঙ্গি, কিশোর গ্যাংসহ সংঘটিত সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে আগের তিন মাসের তুলনায় ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা কমেছে।
কনফারেন্সের দ্বিতীয় অধিবেশনে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলবিষয়ক (এসডিজি) মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন পুলিশের সঙ্গে এসডিজির সম্পৃক্ততা সম্পর্কে বক্তব্য দেন।