পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে জীবিকার খোঁজে ১২ বছর বয়সে শূন্য হাতে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন মো. ফয়সাল। বঙ্গবাজারে কাপড়ের কারখানায় কাজ শুরুর মাধ্যমে তার উপার্জন শুরু। সেই ফয়সালের বয়স আজ ২৭। এই দীর্ঘ ১৫ বছরে ফয়সাল হয়েছেন দুটি কারখানা এবং একটি দোকানের মালিক; কিন্তু বঙ্গবাজারের ভয়াবহ আগুন ফয়সালকে আবারও নিঃস্ব করেছে। আক্ষেপ করে তিনি বলছিলেন, ‘খালি হাতে এসেছিলাম, এখন আবার ফিরে যাচ্ছি নিঃস্ব হয়ে। আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
গত মঙ্গলবার আগুন লাগার ঘটনায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বঙ্গবাজার। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ওপর। দুদিন আগেও যে বঙ্গবাজারে ছিল ব্যবসায়ী আর ক্রেতার হাঁকডাকে মুখর পরিবেশ, সেখানেই আজ শূন্যতা আর হাহাকার।
ফয়সাল জানান, আগে তার দুটি কারখানা ছিল। ঈদ উপলক্ষে একমাস আগে একটি দোকান নিয়েছেন। দোকানে ছোট বাচ্চাদের জামা কাপড় তুলেছেন কয়েকদিন আগেই। দোকানের নাম দিয়েছিলেন আল কারীম। দোকান আর গোডাউন মিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালপত্র ছিল। আগুনের ঘটনায় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমার কারখানা আর দোকান মিলিয়ে প্রায় ৪০ জনের মতো কর্মচারী সরাসরি আমার ওপর নির্ভরশীল। এখন আমার কাছে আর কিছু নেই, আমি তাদের কী দেব। যে শূন্য হাতে এসেছিলাম, সেইভাবেই নিঃস্ব হয়ে গেছি আমি।
বঙ্গবাজারের আরেক ব্যবসায়ী মামুনা গার্মেন্টসের মালিক মো. সাদ্দাম হোসেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে মালপত্র সরাতে এসে দেখেন দোকানে রাখা টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া টাকা হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। কত টাকা ছিল জানতে চাইলে বলেন, এখানে ৫০ হাজার টাকা ছিল। আর দোকানে ছিল ৪ লাখ টাকার মালপত্র। এখন সব শেষ।
সাদ্দামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। দেনা-পাওনা করে তিন মাস আগে বঙ্গবাজারে দোকান নিয়েছিলেন তিনি। তার মতো অনেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন পুড়ে গেছে এই আগুনে। এখন শেষ সম্বলের খোঁজে বঙ্গবাজারে আসছেন তারা। তিনি জানান, তার ৮ জন কর্মচারী। তাদের দেওয়ার মতো তার কাছে আর কিছুই নেই।
রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে মঙ্গলবার দুপুরে। এর পরও বুধবার পর্যন্ত কিছু কিছু জায়গায় জ্বলছিল আগুন, উঠছিল ধোঁয়া। ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেহেতু ভেতরে কাপড়ের গোডাউন রয়েছে, এ জন্য ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করতে আমরা কাজ করছি।