৮ মাস আগে ২১ বছরের ভিক্ষাবৃত্তির জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. জাকির হোসেন। অন্যের বাসায় কাজ করে সঞ্চিত ২ লাখ টাকায় জাকিরকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনে দেন স্ত্রী নাজমা আক্তার। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে এ অটোরিকশাতেই পেয়েছিলেন রুজি-রোজগারের পথ। এ রিকশা চালিয়ে তিনি দৈনিক ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করতেন; কিন্তু গত মঙ্গলবার তার অটোরিকশার ব্যাটারিটি চুরি হয়ে গেছে। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। কোনো উপায় না পেয়ে ব্যাটারি কিনতে আবার ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরেছেন। এর জন্য ৪০ হাজার টাকা দরকার। এ টাকা গোছাতে পারলেই ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেবেন। ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে।
কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরের আবাসন এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে জাকিরের সংসার। বাবুবাজারের ব্রিজের মোড় থেকে কেরানীগঞ্জের কদমতলী পর্যন্ত অটোরিকশা চালাতেন। প্রতিদিনের মতো গত মঙ্গলবার কাজ শেষে অটোরিকশা নিয়ে বাসায় ফেরেন। ওই রাতেই অটোরিকশার ব্যাটারিটি চুরি হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান মেলেনি ব্যাটারিটির। পরে নিরুপায় হয়ে ব্যাটারি কেনার টাকা জোগাড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন।
সম্প্রতি ঢাকার নিম্ন আদালতে ভিক্ষা করতে আসেন জাকির। সে সময়ই তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘চোরে আমার অটোরিকশার ব্যাটারি চুরি করে নিয়ে গেছে। ব্যাটারি কিনতে ৪০ হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা কোথায় পাব, আমার তো সামর্থ্য নেই। তাই টাকা জোগাড়ে আবার ভিক্ষা করতে এসেছি। আজ সারা দিনে পেয়েছি ২০০ টাকা। এটা সংসারে খরচ করব না ব্যাটারি কেনার জন্য জমাব, বুঝতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন কারও সহযোগিতা পেলে ব্যাটারি তাড়াতাড়ি কিনে অটোরিকশা চালিয়ে রোজগার করতে পারতাম। এভাবে ভিক্ষা করে কত দিনে ব্যাটারি কেনার টাকা হবে, সেটা জানি না। সবার সহযোগিতা পেলে আমার উপকার হতো।’
জাকিরের স্ত্রী বলেন, ‘অনেক কষ্টে ২ লাখ টাকা জমিয়ে অটোরিকশাটি কিনে দিয়েছিলাম। ভালোই সংসার চলছিল। ব্যাটারি চুরি হওয়ার পর আবার দুর্দশা নেমে এসেছে। এখন ব্যাটারি কেনা বাবদ ৪০ হাজার টাকা দরকার; ‘কিন্তু চারজনের পরিবারে ব্যাটারি কেনার মতো সামর্থ্য নেই।’