ভূ-রাজনৈতিক কারণেই গণহত্যার স্বীকৃতি নেই

ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ে সোমবার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল।
ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ে সোমবার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল।ছবি : কালবেলা

ভূ-রাজনৈতিক কারণে একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এতদিন উপেক্ষিত ছিল। বঙ্গবন্ধু এ স্বীকৃতি আদায়ে চেষ্টা করে গেছেন। তাকে হত্যার পর এটি থেমে যায়। কিন্তু বিশ্ব একাত্তরের সেই গণহত্যার কথা ভুলে যায়নি। জাতিসংঘও তা জানে। তাই এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে।

গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের কার্যালয়ে আমরা একাত্তর, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) এবং প্রজন্ম ’৭১ যৌথ আয়োজন ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড স্বীকৃতির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন-২০২৩’-এ বিশিষ্টজন এমন মন্তব্য করেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একাত্তরের হত্যাযজ্ঞের মূল কেন্দ্র। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় অধিকাংশ দেশ পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। এটা ছিল গণহত্যার রাজনীতি।

সাবেক ডাচ এমপি ও মানবাধিকার কর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, এই গণহত্যার ইতিহাস সংরক্ষণে নির্যাতনের শিকার ৫টি পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। এক্ষেত্রে মৌখিক ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা একাত্তরের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মুক্তিযোদ্ধা মৃণাল সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ছিলেন আমস্টারডামের ভ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক অ্যান্থনি হলসল্যাগ, যুক্তরাজ্যের সিনিয়র সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ বিচারপতি সৈয়দ আসিফ শাহকার, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণহত্যা গবেষক লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব, ঢাবির সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন প্রমুখ।

স্বীকৃতিই পারে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে : বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় প্রতিনিধিদল মনে করে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই পারে গণহত্যার নৃশংসতা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে। গতকাল গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এমন মন্তব্য করেন।

প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন নেদারল্যান্ডসের সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল, যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন ও সর্ব-ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউরোপীয় ফোরাম ফর বাংলাদেশের সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ। এ সময় প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৭১-এ সংঘটিত গণহত্যা এবং বিভিন্ন দেশে এখনো চলমান গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন।

যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, গণহত্যায় জড়িতদের বিচার ও এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশে যে বর্বর, নৃশংস ও ন্যক্কারজনক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, এর পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে, সেজন্য এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com