আয়নার বায়নায় স্বপ্ন ভাঙল ছোট্ট নাঈম-মায়মুনার

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।ছবি : সংগৃহীত

কয়েকদিন আগে বেসিনের আয়না ভেঙে যায়। মমিনুল ইসলাম তখন তাবলিগে। বাসায় ফিরতেই ছোট্ট নাঈম ইসলাম ও মায়মুনা আক্তার বাবার কাছে বায়না ধরে, নতুন আয়না কিনতে হবে। সন্তানদের সে আবদার মেটাতে মমিনুল স্ত্রী নদী আক্তারকে নিয়ে আয়না কিনতে গিয়েছিলেন সিদ্দিকবাজার; কিন্তু সেখান থেকে তারা ফিরেছেন লাশ হয়ে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার ইসলামবাগে নাঈম আর মায়মুনাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বেসিনের ভাঙা আয়নাটি সেভাবেই রয়ে গেছে। ঘরে নেই শুধু মা-বাবা। ১৪ বছর বয়সী মেয়েটি সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই কাঁদছিল। কোনোভাবেই যেন তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না স্বজনরা। আর ১২ বছরের নাঈম তখন তাকিয়ে ছিল অপলক দৃষ্টিতে।

মা-বাবা হারিয়ে শিশু দুটির বেঁচে থাকার অবলম্বন এখন বৃদ্ধ দাদা আবুল হাসেম আর দাদি মমিনা খাতুন। তারা বলছিলেন, ভাঙা আয়না জোড়া লাগাতে গিয়ে নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎটাই ভেঙে গেছে। তারা এখন কী নিয়ে বাঁচবে।

মমিনা খাতুন বলেন, ‘নাতি-নাতনির সামনে যেতে পারি না। ওদের মুখের দিকে তাকানো যায় না, ওগোরে আমি কী দিয়া বুঝ দিমু। ওগো কেমনে মানুষ করমু! দুজন একলগে গেল, একজন থাকলেও মন মানানো যাইত।’

আর দাদা আবুল হাসেম বলেন, ‘ঘটনার দিনই তাবলিগ থেকে বাসায় আসে মমিনুল। বিকেলে নদীকে নিয়ে বেসিনের আয়না কিনতে গুলিস্তানে যায়। সন্ধ্যার পর খবর আসে তারা মেডিকেলে। সেখানে গিয়ে ছেলে আর ছেলের বউয়ের লাশ পাই। বুধবার আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয় তাদের।

মমিনুলের চাচা জয়নাল আবেদীন জানান, মনিনুলের বাবা আবুল হাশেম একসময় ব্যবসা করতেন। কিন্তু এখন কিছুই করেন না। বাসা ভাড়া থেকে কিছু টাকা পান। মমিনুলের ব্যবসার টাকায় তাদের সংসার চলত। নিউমার্কেটে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবসা ছিল তার।

বোন হালিমা খাতুন জানান, মা-বাবার মৃত্যু ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছে না মায়মুনা ও নাইম। কিছুক্ষণ পরপরই তাদের খোঁজ করছে। তখন বুঝিয়ে বললে বুঝে; কিন্তু আবার ভুলে যায়। অস্বাভাবিক আচরণ করে। খুব কষ্ট করে খাবার খাওয়াতে হয়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com