পাহাড়ে ত্রাসের রাজত্ব কেএনএফের

পাহাড়ে ত্রাসের রাজত্ব কেএনএফের

সশস্ত্র হামলা চালিয়ে সেনাসদস্যদের হত্যা, নির্মাণ শ্রমিক অপহরণ, পরিবহনে চাঁদা আদায়সহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। দুর্গম এলাকার সুবিধা কাজে লাগিয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো কেএনএফ সদস্যরা জঙ্গিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। অভিযান অব্যাহত থাকলেও সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছে কেএনএফ। দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে কারা অর্থ, অস্ত্র ও সমর্থন দিচ্ছেন, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি কেএনএফকে নির্মূলে দ্রুত কৌশল নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পার্বত্য শান্তি চুক্তিবিরোধী সংগঠন কেএনএফের দাবি, রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। সেগুলো হলো বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম এলাকা নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করেছে কেএনএফ। সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করে। ১১ মার্চ ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে তারা। ১২ মার্চ ও গত ১৬ মে কেএনএফের হামলায় সেনাবাহিনীর তিন সদস্য নিহত হন।

আহত হন আরও চারজন। কেএনএফের এসব কর্মকাণ্ড দেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হিসেবেই দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, হঠাৎ করেই কেন কেএনফ হামলা চালাচ্ছে? তাদের নেপথ্যে কারা আছেন। ভেতরে-বাইরে কারা তাদের অর্থ, অস্ত্র ও সমর্থন দিচ্ছেন—এসব চিহ্নিত করতে হবে। তারা যেহেতু বাহিনীর ওপর হামলা করেছে, সেহেতু যত দ্রুত সম্ভব তাদের নির্মূলের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি চুক্তি সই হয়। এই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করতেই কেএনএফ অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করেন আবদুর রশীদ।

অর্থের বিনিময়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে ২০২১ সালে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে চুক্তি করে কেএনএফ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, জামা’আতুল আনসারের ৫৫ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারা। কেএনএফের ক্যাম্পে তিন ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৩ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এরই মধ্যে র্যাব ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে কেএনএফ- শারক্বীয়ার কর্মকাণ্ড। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, অভিযানে জামা’আতুলের ৭৫ নেতাকর্মীও গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে জানিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম, গণমাধ্যম শাখা ও সামরিক শাখার প্রধানকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com