রোজার আগে বাজারে নিত্যপণ্যের উত্তাপ

রোজার আগে বাজারে নিত্যপণ্যের উত্তাপ
ছবি : সংগৃহীত

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র মাস রমজান। মাসব্যাপী ধর্মীয় আচার পালনে তাই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রমজান শুরুর আগে বাজারে নানা পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। আর সেই সুযোগে এ সময়টাতে নিত্যপণ্যের দামও থাকে সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপণ্য দাম ছড়াচ্ছে উত্তাপ। গত রমজান শুরুর আগে যেসব পণ্য ১৫০ টাকায় পাওয়া যেত, এবার তা কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। তবে একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে ২ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মসলা, ডিম, মুরগি, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা অবশ্য এর জন্য আমদানি জটিলতা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে দায়ী করছেন। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কাটছে। এর প্রতিকারে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, রমজান মাসে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না।

অন্যদিকে বাজার পরিস্থিতি ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি শামসুল আলমের দাবি, সরকার জনগণকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে ভোক্তার অধিকার রক্ষার বিষয় সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে।

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রসঙ্গে এস আলম গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আকতার হাসান বলেন, রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের অধিকাংশই আমদানি করতে হয়। ডলার সংকট, এলসি জটিলতা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এসব নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সরকারি সহযোগিতায় বেশিরভাগ পণ্যের আমদানি স্বাভাবিকভাবে করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি, দেশের মানুষ রমজানে বাড়তি কোনো ভোগান্তিতে পড়বে না।

গতকাল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত বছর এ সময়ে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। মাঝারি মানের চালের কেজি ৫৪ থকে ৫৬ টাকা, গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা, সরু চালের কেজি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা, যা ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

টিসিবির হিসাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ থেকে ১৭২ টাকায়, যা গত বছর এ সময়ে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। ৫ লিটারের বোতল ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকা, ছিল ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা। ১ লিটারের বোতল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা, ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। খোলা পাম অয়েলের লিটার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। সুপার পাম অয়েল ১৪৫ থেকে ১৪০ বা তারও বেশি, ছিল ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকা।

বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ৮৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর এ সময়ে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ ছাড়া বুটের ডাল-অ্যাঙ্কর-পেঁয়াজুর ডাল বা মোটা ডালের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।

বর্তমানে বাজারে সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুরের দাম ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, যা গত বছর সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আর যে খেজুর গত বছর ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, বর্তমান বাজারে সেই খেজুরের কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com