
নাইজেরিয়ান ও বাংলাদেশি কয়েকজন নাগরিক সংঘবদ্ধভাবে ডিজিটাল জাল-জালিয়াতি করে আসছিলেন। চক্রটি ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি খুলে টার্গেট লোকদের সঙ্গে চ্যাটিং করে বন্ধুত্ব করত। একপর্যায়ে গিফট হিসেবে ল্যাপটপ, আইফোন ও অর্থ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কাস্টমস চার্জ দিয়ে বিমানবন্দর থেকে গিফট সংগ্রহ করতেও বলা হয়।
তাদের কথামতো কথিত কাস্টমস অফিসারের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালেও মিলত না গিফট। রাজধানীর পল্লবী থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আদালতে দেওয়া চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৯ মে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি উপপরিদর্শক রাশেদুল হক সরকার আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ১১ নাইজেরিয়ানসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওচিতা ওকোচোকো, চিছম হিমানুয়েল অভিযুলু, ওকেকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, অনেকা এম্বা, চিছম এনটনি ইকুয়েঞ্জ, ওকেয়া আজুবাইক, অনুয়ারাহ ওজুয়েমেনা ডানিয়েল, আনুয়ারাহ আজুইমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফানসিন্স, লকি ডোমাডা চিনেডো, বাংলাদেশি বিপ্লব লস্কর, মো. রাজু ও বাপ্পি হোসেন। তাদের মধ্যে রাজু ও বাপ্পি পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। অন্য ১২ আসামি জামিনে। এ ছাড়া আসামি ফরহাদ, ইউসুফ, হালিম, গোলাম কিবরিয়া, জাহিদ হোসেন, আহসান হাবিব, মামুন হাসানসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলেও নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
২০২২ সালের ২০ অক্টোবর রাজধানীর পল্লবী ও ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ১১ বিদেশি নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডলার ট্রিক মেশিন, প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত ১৭টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, কেমিক্যালের বোতল ও বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় উপপরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল আলম পল্লবী থানায় মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, আসামিরা সংঘবদ্ধ ডিজিটাল জাল-জালিয়াত চক্রের সদস্য। তারা সবাই পূর্বপরিচিত। বাংলাদেশি বিপ্লব, ইউসুফ, রাজু, হালিম, গোলাম কিবরিয়া, জাহিদ, রাকিবুল, মামুন, ফরহাদ ও বাপ্পি বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক অ্যাকাউন্ট খোলেন। পরবর্তী সময়ে এসব অ্যাকাউন্ট নাইজেরিয়ান আসামিদের কাছে দেওয়া হয়।
যেভাবে সখ্য গড়ে তুলে প্রতারণা করত চক্রটি : আসামিরা তাদের বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খোলেন। এরপর টার্গেট ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। পরে আসামিরা তাদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন। ভুক্তভোগীদের তারা বলেন, তুমি আমার বন্ধু, আমার অনেক ডলার/টাকা আছে, আমি তোমার সঙ্গে দেশে ব্যবসা করতে চাই। কাস্টমস চার্জ দিয়ে বিমানবন্দর থেকে গিফট সংগ্রহ করতে বলা হয়। পরে কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে কল দিয়ে গিফটের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। এভাবে মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠিয়ে ভুক্তভোগীদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।