এনায়েত শাওন, সাতক্ষীরা থেকে ফিরে
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৫ এএম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘রাইট টু গ্রো’ প্রকল্প

সাতক্ষীরার সাত গ্রাম এখন ‘স্বাস্থ্যকর’

সাতক্ষীরার সাত গ্রাম এখন ‘স্বাস্থ্যকর’

সরকার প্রদত্ত সুবিধা যে অনুগ্রহ নয়, বরং তা মানুষের নাগরিক অধিকার—সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জানাশোনা আছে, এমন ব্যক্তি খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে শহর কিংবা গ্রামে। এই নাগরিক অধিকার আদায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম এখন স্বাস্থ্যকর গ্রামে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন এই জনপদগুলোকে স্বাস্থ্যকর গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমের এই সীমান্তবর্তী এলাকায় লবণাক্ততার সঙ্গে লড়ে যাওয়া মানুষগুলো সরকার ও প্রকল্প নির্ধারিত ৯টি মানদণ্ডের সবই পূরণ করে স্বাস্থ্যকর গ্রামের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। স্বাস্থ্যকর গ্রামের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য নিশ্চিত করতে হয়েছে প্রতিটি পরিবারের জন্য নিরাপদ পানি, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও ব্যবহার, পাঁচটি বিশেষ সময়ে অবশ্য নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস, নবজাতকের জন্য শালদুধ ও বুকের দুধ পান, পাঁচ বছরের সব শিশুর জন্মনিবন্ধন ও বেড়ে ওঠা পর্যবেক্ষণ, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং অধিকার প্রাপ্তির জন্য পদ্ধতি সম্পর্কে সব সদস্যকে পর্যাপ্ত শিক্ষা।

পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সব মানদণ্ডে উন্নীত হওয়ার পরই স্বাস্থ্যকর গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। তিনি কালবেলাকে বলেন, এনজিওর পরামর্শে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফসল এই স্বাস্থ্যকর গ্রামের স্বীকৃতি প্রাপ্তি। উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও এনজিওর যৌথ প্রয়াসের ফল এই স্বাস্থ্যকর সাতটি গ্রাম, যা সারা দেশেই বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।

রাইট টু গ্রো প্রকল্পের আওতায় দেবহাটা ইউনিয়নের আজিজপুর, সুশীলগাঁতী ও টাউনশ্রীপুর, নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বেজোড় আইট গ্রাম, পারুলিয়ার খড়িয়াডাঙ্গা ও চারকুনি গ্রাম এবং কুলিয়ার নুনেখোলা গ্রাম রূপান্তরিত হয়েছে স্বাস্থ্যকর গ্রামে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। ফলে জনগণের প্রাপ্য অধিকার অনুযায়ী বরাদ্দের যথাযথ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে ৫ নম্বর দেবহাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন বকুল কালবেলাকে বলেন, স্বাস্থ্যকর গ্রাম গড়ে তুলতে যে ৯টি গুণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন তা অর্জিত হয়েছে। আমি নিজে খোঁজ নিয়েছি, এমনকি আমার পরিচিতদের মাধ্যমেও তদন্ত করে দেখেছি। সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের অজ্ঞতা দূর করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পুষ্টি নিশ্চিত করতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তা যেন ইউনিয়নের সব গ্রামে বাস্তবায়ন হয়, সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে ৬টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা, খুলনা, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর ৫টি উপজেলায় পাঁচ বছরমেয়াদি ‘রাইট টু গ্রো’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটায় ৫টি ইউনিয়নের কাজ করছে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কনসোর্টিয়ামের অন্য পাঁচটি সংস্থা হলো—অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার, দ্য সেন্টার ফর ইকোনমিক গভর্ন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি আফ্রিকা (সিগা), ম্যাক্স ফাউন্ডেশন, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট।

এ বিষয়ে রাইট টু গ্রো প্রকল্পের ম্যানেজার জগন্ময় প্রজেশ বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অধিকারগুলো পরামর্শের মাধ্যমে জনগণের জন্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। সেবাদানকারী কর্তৃপক্ষ ও গ্রামের সেবাগ্রহীতাদের মধ্য যে তথ্যগত ফাঁক রয়েছে, তা দূর করে সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যকর গ্রাম গড়ে তোলাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। গ্রামে গ্রামে নাগরিক সমাজ সংগঠন গড়ে তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্যকর গ্রাম গড়তে কাজ করেছি।

সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রাম পরিদর্শনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে চাষ হচ্ছে সবজি, সুপেয় পানির জন্য আধুনিক সুবন্দোবস্ত, কোন কোন সময়ে হাত ধৌত করা প্রয়োজন সে বিষয়ে সম্যক ধারণা ও ধোয়ার উপকরণের ব্যবস্থা রাখা, শিশু ও প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে প্রত্যেক গ্রামবাসীই অবহিত রয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে পূর্বে ব্যবস্থা না থাকলেও এখন উন্নত স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা রয়েছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করেছে গ্রামভিত্তিক নাগরিক সমাজের সংগঠন (সিএসও)। জনগণ ও সরকারের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে চলছে সিএসওর সদস্যরা। আর এতে কৌশলগত সহযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে রাইট টু গ্রো প্রকল্প।

সিএসওদের সূত্রে জানা যায়, আজিজপুর গ্রামের ৩২৪টি পরিবারের সবাই নিরাপদ পানি পান করে, রয়েছে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, সঠিকভাবে হাত ধোয়ার আয়োজন। জন্ম নেওয়া চারজন নবজাতকই পেয়েছে শালদুধ, দশজন শিশু ৬ মাস বুকের দুধ পান করেছে, পাঁচ বছরের নিচের ৪৬টি শিশুর জন্মনিবন্ধন ও বৃদ্ধি চার্ট আছে, ৫ জন গর্ভবতী ও ৩ জন প্রসূতি সবাই কমপক্ষে ৪ বার চেক-আপ করেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৭ ফেব্রুয়ারি : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

টিভিতে আজকের খেলা 

২৭ ফেব্রুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

তীব্র উত্তেজনার মধ্যেও পারমাণবিক কর্মসূচিতে এগিয়ে ইরান

বিশ্বে ১২ লাখ কোরআন শরীফ বিতরণ করবে সৌদি

মাইক্রোসফট-ইসরায়েল চুক্তির প্রতিবাদ করায় কর্মীদের দমন

সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে গাজা, ইসরায়েলের চার দাবি

খনিজ চুক্তি নিয়ে ইউক্রেনের সিদ্ধান্ত : যুদ্ধে নতুন মোড়

১০

পাইকগাছায় হচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস

১১

রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে খাল পরিষ্কার

১২

সেনা প্রধানের সঙ্গে ডিএনসিসি প্রশাসকের সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৩

বাঙলা কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই পক্ষের সংঘর্ষ

১৪

রাতে খুবি ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল

১৫

রাজশাহীতে ডাকাতি-ছিনতাই-চাঁদাবাজি চক্রের ১১ জন গ্রেপ্তার

১৬

গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ, পুলিশ দেখে স্ত্রীকে রেখে পালালেন স্বামী

১৭

পাকিস্তান-বাংলাদেশ না পারলেও পেরেছে আফগানিস্তান

১৮

ফেঁসে যাচ্ছেন ‘শেখ বাড়ি সিন্ডিকেট’ সদস্য খুবির সাবেক দুই ভিসি

১৯

৭ বছর পর বিএনপির বর্ধিত সভা

২০
X