সন্তানের পরিচয়ে বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম লেখা কার্যকরী হয় ২০০০ সালে। এই নিয়ম শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হোক যেমন আমরা চাই, সেইসঙ্গে আমরা চাই সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি। গতকাল শনিবার সকালে ৫২টি সংগঠনের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘সন্তানের ওপর মায়ের অভিভাবকত্বের অধিকার’– প্রতিপাদ্যে গতকাল রাজধানীতে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ‘জন্ম দিলাম, স্তন্য দিলাম, তবুও সোনা আমার নয়, এ কেমন আইন’, ‘সন্তানের অভিভাবকত্বে সমান হবো অধিকারে’–স্লোগান সংবলিত ফেষ্টুন ও ব্যানার নিয়ে রমনা পার্কের অরুণোদয় গেট থেকে পদযাত্রাটি মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে থামে। অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষের আন্দোলন সম্পাদক তামান্না খান।
এ সময় বক্তারা বলেন, প্রচলিত অভিভাবকত্ব আইনটি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, দেশের নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ সনদে সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে পিতা ও মাতা উভয়ের সমান অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকার অনুসমর্থন করেছে। বক্তারা কতগুলো সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কেবল শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রেই সন্তানের ওপর মায়ের অভিভাবকত্বের অধিকার, অভিভাবকত্ব আইনে মা-বাবা দুজনের সমান অধিকার। অর্থাৎ বাবার মতো মা-ও তার সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক হবেন। অভিভাবকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে ভরণ-পোষণ দেওয়ার সামর্থ্য প্রধান বিবেচ্য হবে না। মা অথবা বাবার মধ্যে যিনি সক্ষম তিনিই সন্তানের ভরণ-পোষণ দেবেন, উভয়ে সক্ষম হলে উভয়েই দেবেন, তাতে অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা নির্ভর করবে না।
আলোচনা শেষে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান পরিবেশন করেন নারীপক্ষের সদস্য ওয়ার্দা আশরাফ। কবিতা আবৃত্তি করেন ইকবাল আহম্মেদ। নাচ ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ পরিবেশন করে লাইট হাউস। এ ছাড়া বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে আওয়াজ তুলে লাঠি খেলা হয়। পদযাত্রায় ৫২টি সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার, বয়স, বিভিন্ন লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন সংগঠনের প্রায় ৪৫০ জন অংশগ্রহণ করেন।