ফিটনেস ট্রেনিংয়ের জন্য জিম প্রস্তুত, প্রস্তুত কোচিং স্টাফরাও। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের ডরমিটরি থেকে ফুটবলাররা প্রতিদিনের মতো নেমে আসেননি। খোঁজ নিয়ে কোচিং স্টাফরা জানতে পারেন, সিনিয়র নারী ফুটবলাররা অনুশীলন বর্জনের ডাক দিয়েছেন।
সাফ জয়ের পর ইতিবাচক খবরের মধ্যে থাকা ফুটবলারদের এমন অনশনের কারণ দুটি। প্রথমটি অর্থকড়ি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ করা। দ্বিতীয়টি সাফ জয়ের পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ঘোষিত পুরস্কারের অর্থ অনতিবিলম্বে দলের সদস্যদের প্রদান করা।
নারী ফুটবলারদের দ্রোহের আগুনের এ তাপ বাইরে ছড়াতে দেয়নি বাফুফে। দ্রুতই সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ছুটে আসেন। নারী ফুটবলের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরনকে নিয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে সভায় বসেন। অনুশীলন বর্জনের ঘটনায় নিজের হতাশার কথা জানান বাফুফে সভাপতি। নারী ফুটবলারদের এমন আচরণে হতাশা ও ক্ষোভও প্রকাশ করেন। শেষপর্যন্ত প্রতিশ্রুতির পুরোনো মন্ত্রেই সমাধানের পথ খুঁজেছেন। দ্রুতই নারী ফুটবলারদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন সাবেক এ তারকা ফুটবলার। দল ঘনিষ্ঠ সূত্র নারী ফুটবলারদের শান্তিপূর্ণ অনশনের বিষয় ও তা সমাধানের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে।
ওই সূত্র আরও জানায়, প্রথম দিন জিম সেশন ছিল। জিমে নারী ফুটবলাররা না আসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তারা অনুশীলন বয়কট করেছেন। পরদিন ট্রেনিং সেশনে ফুটবলাররা আসবেন কি না—এ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন কোচিং স্টাফরা। তারপরও ট্রেনিংয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন তারা। ফুটবলাররা না আসায় সেদিন আর অনুশীলন হয়নি। তারপরই অচলাবস্থা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতিতে আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, নারী ফুটবলাররাও নিয়মিত অনুশীলন কার্যক্রমে ফিরেছেন। এ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে দলের কোচিং স্টাফ ও ফুটবলাররা মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন। কেউ এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নারী ফুটবলাররা বেশকিছু দিন ধরেই অর্থকড়ি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গেল সেপ্টেম্বরে বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা পূরণ না করায় ফেব্রুয়ারি ফের বাফুফে প্রধানের কাছে নিজেদের দাবি জানান ফুটবলাররা। এ সময় আর্থিক বিষয়ের সঙ্গে দৈনিক খাবারের বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিও জানানো হয়। বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ৭০০ টাকার খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। জিম ও অনুশীলনের ধকলের পর যা ফুটবলারদের জন্য অপর্যাপ্ত। মাসিক ভাতা ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করার দাবি ছিল ফুটবলারদের। দুটি বিষয়ই বিবেচনা করবেন বলে ফুটবলারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
সাফ জয়ের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাফুফে সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক নারী দলকে পুরস্কার হিসেবে ৫০ লাখ টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দেন।
বিসিবি থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে, বাফুফে সময় দিলেই ঘোষিত পুরস্কারের অর্থ হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু বাফুফে কর্মকর্তাদের সে সময়ই হয়ে উঠছে না। যা নারী দলের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। যার কারণে অবস্থান কর্মসূচির পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।
প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ্বাসে অনুশীলন বর্জনের ডাক দেওয়া ফুটবলাররা ফিরেছেন। বল এখন বাফুফের কোর্টে।