ড্রেসিংরুম থেকে সংবাদ সম্মেলনে রওনা দেওয়ার পথে জাকির হাসানকে ডেকে থামালেন রাহুল দ্রাবিড়। উইকেট দেখতে এসে জাকিরের পিঠ চাপড়ে দিয়ে প্রশংসা করেছেন ভারতীয় কোচ। মাঠ পেরিয়ে আসার পথে দু’পাশের গ্যালারি থেকে দর্শকদের মুখেও জপে ছিল তার নাম, ‘জাকির, জাকির’। হাত নেড়ে সাড়া দিলেন তিনি। দশ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন শেষে তো ফিরতেই পারছিলেন না তিনি। গণমাধ্যমকর্মীদের সেলফির আবদার মেটাতে হয়েছে আরও মিনিট দশেক।
দিনের শিরোনাম তো জাকির। রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করে সবার মধ্যমণিও ২৪ বছর বয়সী এই ব্যাটার। তাই তো তাকে ঘিরে এত উচ্ছ্বাস। শুধু যে ম্যাচের পর হয়েছে, তাও কিন্তু না। অক্ষর প্যাটেলকে সুইপ করে যখন রানের জন্য দৌড়াতে গিয়ে দেখলেন ফাইন লেগ দিয়ে বলটি বাউন্ডারি হয়ে গেল, সঙ্গে নামের পাশে ১০০ তখন হেলমেট খুলে উদযাপনটা ছিল দেখার মতো। অন্য পাশে থাকা মুশফিকুর রহিমও সতীর্থের উদযাপনে যোগ দিলেন। এরপর প্রতিপক্ষ দলের অক্ষর, মোহাম্মদ সিরাজ ও বিরাট কোহলিও পিঠ চাপড়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ ওপেনারকে।
৩১৪ মিনিট উইকেটে থেকে দারুণ সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন জাকির। টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ওপেনার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। ১৪৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসে যা চতুর্থ। ভারতের বিপক্ষেও প্রথম বাংলাদেশি কোনো ব্যাটারের প্রথম তিন অঙ্ক। আর চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি পেলেন সিলেটের এই ব্যাটার। মাঠে ও মাঠের বাইরে কোহলি-দ্রাবিড়দের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, প্রসঙ্গ আসতেই সংবাদ সম্মেলনে জাকির বলেছেন, ‘স্যার (দ্রাবিড়) বলেছিলেন অভিনন্দন তোমাকে, খুব ভালো খেলেছো। এমন একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড় এবং কোচ এসে যদি অনুপ্রাণিত করে অবশ্যই খুব ভালো লাগে।’ কোহলি প্রসঙ্গে জাকির বলেন, ‘ওনি অভিনন্দন জানালেন। আমি ধন্যবাদ দিছি।’ প্রায় পাঁচ বছর আগে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে অভিষেক হয়েছিল। সে এক ম্যাচই এতদিন তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে যাচ্ছিলেন তিনি। চলতি বছর ডিউক বলে হওয়া জাতীয় লিগে ৫৫.২৫ গড়ে ৪৪২ রান করে টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ সংগ্রাহক হয়েছিলেন। আগের বছর বিসিএলে ৯৯ গড়ে করেছিলেন ৩৯৬ রান। ৫০ ওভারের সংস্করণের সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৪২.৪০ গড় করেছিলেন ৬৩৬ রান। এরপর গত মাসে কক্সবাজারে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৭৩ রান করে ম্যাচ বাঁচিয়ে ছিলেন তিনি।
লম্বা সময় পারফর্ম করে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। সেঞ্চুরির পথে ‘এ’ দলের হয়ে সে ইনিংস কাজে লেগেছে জানিয়ে জাকির বলেছেন, ‘ইনিংসটার জন্য আত্মবিশ্বাস ছিল মনের ভেতরে। প্রসেস অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করছিলাম। ব্যাক অফ দ্য মাইন্ডে ছিল, প্রসেসটা ঠিক রেখে খেলার চেষ্টা করব।’
ঘরোয়া ক্যারিয়ারে বেশিরভাগ সময়ই তিন কিংবা চারে ব্যাট করেছেন তিনি। উদ্বোধনী ব্যাটার হিসেবে খেলার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। কিন্তু জাতীয় দলে খেলতে হয়েছে ওপেনার হিসেবে। কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন, তার মুখেই শুনুন, ‘ওপেনিং খুব একটা করিনি, তিন-চারে সবসময় ব্যাটিং করেছি। তবুও প্রথম শ্রেণিতে নতুন বলে সবসময় মুখোমুখি হতে হয়।’