জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উত্তর-পশ্চিম নেটে থ্রো-ডাউনে অনুশীলন করছিলেন লিটন দাস। ব্যাটিং ত্রুটি সারানোর এ প্রচেষ্টার ভিডিও ধারণ না করতে আশপাশে থাকা ক্যামেরাম্যানদের অনুরোধ করেছিলেন এ ব্যাটার। খানিক বাদে নেট ছেড়ে সেন্টার উইকেটে গেলেন লিটন। সেখানে তার কোচের ভূমিকায় দেখা গেল সাকিব আল হাসানকে! লিটনকে লং অন, লং অফের দুর্বলতা কাটানোর টোটকা দিতে দেখা গেল সাকিবকে। দূরে দাঁড়িয়ে লং অন, লং অফ দিয়ে লিটনকে কয়েকটি ছয় মারতে দেখে সাকিব বলে উঠলেন, ‘কী রে দেখছস, তুই নাকি মারতে পারস না!’ সংস্করণ বদলেছে, বদলেছেন সাকিবও। ওয়ানডেতে ছিলেন অলরাউন্ডার।
বোলিং-ব্যাটিংয়ের বাইরে তেমন কোনো দায়িত্ব ছিল না। কিন্তু ২০ ওভারের সংস্করণে তো তিনি নেতা। ব্যাটিং-বোলিং ছাড়াও দলটাকে গুছিয়ে নেওয়ার পুরো দায়িত্ব তার কাঁধে। সংস্করণ বদলাতেই সব দায়িত্ব নিজের চওড়া কাঁধে নিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার; হয়ে উঠলেন কোচিং স্টাফ! ওয়ানডে সিরিজ শেষে টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছে বাংলাদেশ। একদিন বিশ্রাম শেষে গতকাল অনুশীলনে যোগ দেয় পুরো দল। অনুশীলনের নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট আগে থেকেই ছোট দৈর্ঘ্যর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু
সাকিব-লিটনদের। ওয়ার্মআপের পর কার কী দায়িত্ব তা ছক এঁকে দেখিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সবাইকে এক করে মিটিং করেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এখানেই যেন প্রধান কোচের দায়িত্ব শেষ। পুরো সাগরিকায় ব্যস্ত দেখা গেছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে।
ওয়ার্মআপ শেষ হতেই কে কোন নেটে ব্যাটিং করবেন জানিয়ে দিলেন সাকিব, ‘এক আর দুইয়ে দুই নেটে (দক্ষিণ-পশ্চিম)। তিন আর চার ওইদিকে (উত্তর-পশ্চিম)। সাকিবের বলার পরই প্রথম দুই নেটে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও রনি তালুকদার। অপর নেটের দিকে হাঁটা শুরু করেন লিটন ও তৌহিদ হৃদয়, তাদের সঙ্গে যান ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সও। যেন কোচরাও এখন অধিনায়কের নির্দেশনামতোই কাজ করছেন।
চার ব্যাটারকে চার নেটে পাঠিয়ে পরবর্তী সময়ে কে কোন নেটে যাবেন, সেটাও জানিয়ে দিলেন সাকিব। এরপর নিজে গেলেন ফিল্ডিং অনুশীলনে, সেখানে পাঁচটির মতো ক্যাচ ধরে চলে গেলেন নিজের ট্রলি ব্যাগের কাছে। এ সময় নেট ছেড়ে সেন্টার উইকেট আসেন লিটন। ডানহাতি ব্যাটারকে ‘হিটিং বেজ’ সম্পর্কে পরামর্শ দিতে দেখা যায় সাকিবকে। পরে বেশ কয়েকটি ছক্কা হাঁকান লিটন, সন্তুষ্টি ফুটে ওঠে বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠেও, ‘দেখছিস, তুই পারিস’।
চার নেটে ৪৫ মিনিট ব্যাটিং করেন রনি, শান্ত, হৃদয়রা। এরপর তাদের নিয়ে মাঝমাঠে হয় বলকে বাউন্ডারির বাইরে ফেলার প্রতিযোগিতা। এখানেও নেতৃত্বে সাকিব। নিয়ম ছিল বাইরে যতবার ফেলবে, ততবারই ব্যাটিং করা যাবে। মিস হলেই আসবেন অন্য কোনো ব্যাটার। একবার তো সাকিব আর শান্তর মধ্যে এ নিয়ে খুনসুটি করতেও দেখা যায়।
সাকিবের মারা বলটি বাউন্ডারিতে পৌঁছায়নি বলে মত ছিল শান্ত, হৃদয়, আফিফ, লিটনদের। কিন্তু পৌঁছেছে বলে তাদের সঙ্গে খুনসুটিতে আবারও ব্যাটিং করতে চান সাকিব। কিছুটা জোর করেই সাকিবকে সরান সতীর্থরা।
পুরো অনুশীলনে শিষ্যদের পাওয়ার হিটিং ভালো করে পরখ করেছেন হাথুরুসিংহে। সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন, ‘পাওয়ার হিটিং বড় একটা গুণ। কিন্তু এ জন্য আপনার পদ্ধতিও ভালো জানা থাকতে হবে। যেমন ভালো ব্যাট সুইং, ভালো ভিত, এসব ঠিক রাখলে ভালো হয়ে ওঠা যায় একটু। জোর থাকলে আরও ভালো হয়ে ওঠা যায়, এটি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।’