শুকায়নি সাদিয়ার মনের ক্ষত

শুকায়নি সাদিয়ার মনের ক্ষত

ক্রীড়া প্রতিবেদক

২০১৭ সালে রান্নাঘরে অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হন কৃতী শুটার সাদিয়া। দগ্ধ হয় শরীরের ২৫ শতাংশ। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্বাসনালিও। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে কয়েক মাসের চিকিৎসায় গায়ের ক্ষত শুকিয়েছে বটে; মনের ক্ষত এখনো দগদগে তার!

সৈয়দ পরিবারের পাঁচ সন্তানের সবাই জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠিত ক্রীড়াবিদ। তিনজনের হাত ধরে এসেছে আন্তর্জাতিক সাফল্যও। সবচেয়ে উজ্জ্বল সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা। দুর্ঘটনাকবলিত সাবেক এ শুটারের জীবনই এখন ধ্বংসস্তূপ!

২০১৭ সালে রান্নাঘরে অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হন। দগ্ধ হয় শরীরের ২৫ শতাংশ। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্বাসনালিও। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে কয়েক মাসের চিকিৎসায় গায়ের ক্ষত শুকিয়েছে বটে; মনের ক্ষত এখনো দগদগে! গোটা পরিবার মিলে চেষ্টা করছেন কৃতী এ শুটারকে মানসিকভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। অর্ধযুগেও মনের ক্ষত শুকায়নি। ‘পরিবারের সবার একটাই ধ্যানজ্ঞান— সাদিয়াকে মানসিকভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। এজন্য আমরা সম্ভাব্য সবকিছুই করছি। জানি না মেয়েটা আদৌ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না’— কালবেলাকে বলছিলেন সাদিয়ার বাবা সৈয়দ সারোয়ার আলম।

যাকে নিয়ে আলোচনা, সেই সাদিয়া সুলতানার ছোট্ট শুটিং ক্যারিয়ারটা ছিল দারুণ আলো-ঝলমলে। ২০১০ যুব অলিম্পিকের উদ্বোধনী মার্চ-পাস্টে জাতীয় পতাকা বহনের আগেই বৈশ্বিক আসরে সাফল্যের সিঁড়ি টপকানো হয়ে গেছে। পাদপ্রদীপের আলোয় আসা ঢাকা এসএ গেমস দিয়ে। শারমিন আক্তার রত্মা ও তৃপ্তি দত্তকে নিয়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন। একক ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন শারমিন আক্তার রত্মা; রৌপ্য জিতেছেন সাদিয়া সুলতানা। দিল্লি কমনওয়েলথ শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল একক ইভেন্টে রত্না রৌপ্য জয় করেন; এ ইভেন্টে সাদিয়া সুলতানা ছিলেন পদকশূন্য। দ্বৈত ইভেন্টে সাদিয়া-রত্না জুটির কল্যাণে ভারত ও ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে স্বর্ণ জিতেছে বাংলাদেশ। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ব্যাজ ইভেন্টে শারমিন আক্তার রত্না স্বর্ণ জিতেছেন, রৌপ্য জেতেন সাদিয়া সুলতানা।

কেবল সাদিয়া নন, সৈয়দ পরিবারের বাকি চার ক্রীড়াবিদ নিয়মিতই আলো ছড়িয়েছেন; এখনো ছড়াচ্ছেন। যার সূচনা সৈয়দ সালেহ মো. সাজ্জাদ উল্লাহকে দিয়ে। ২০১১ সালের জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন সাজ্জাদ বর্তমানে স্বীকৃত কোচ হিসেবে কাজ করছেন। সাজ্জাদের পথ ধরেই ক্রীড়াঙ্গনে আসেন সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা। সহোদরের মতো ব্যাডমিন্টন নয়, বেছে নেন শুটিং। সাদিয়ার দেখানো পথে শুটিংয়ে আসেন সৈয়দা সায়মা সুলতানা। অগ্রজের মতো অতটা সমৃদ্ধ নয় তার ক্যারিয়ার। জাতীয় আসরে একাধিক পদক জিতেছেন সায়মা।

সাদিয়া-সায়মার মাধ্যমে সৈয়দ পরিবারে শুটিংয়ের যে স্রোত প্রবাহিত হয়েছে, তাতে ছেদ টানেন সৈয়দ সাকের মো. সিবগাত উল্লাহ। বড় ভাই সাজ্জাদের মতো বেছে নেন ব্যাডমিন্টন। ২০২০ সালে সামার ওপেন র‌্যাঙ্কিং প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হন এ শাটলার। ২০২১ সালে ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ জুনিয়র ইন্টারন্যাশনাল সিরিজের ডাবলসে গৌরব সিংহের সঙ্গে জুটি বেঁধে স্বর্ণ জিতেছেন সিবগাত উল্লাহ। এটি ছিল সম্প্রতি ব্যাডমিন্টনের আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের সেরা অর্জনগুলোর একটি।

সিবগাতের মতো এস এস এম সিফাত উল্লাহ গালিবও ব্যাডমিন্টন বেছে নিয়েছেন। গত বছর দক্ষিণ এশিয়া জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের অনূর্ধ্ব-১৫ ক্যাটাগরিতে মুস্তাকিম হোসেনকে নিয়ে ডাবলসে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। একক ইভেন্টে খেলেছেন সেমিফাইনাল। যুব বাংলাদেশ গেমসের এককে রুপা জয়ী সিফাত উল্লাহ গালিব মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে আইনুল তাজরীনকে নিয়ে স্বর্ণ জিতেছেন। দেশের ব্যাডমিন্টনে অন্যতম প্রতিভাবান ও উদীয়মান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে তাকে। সাফল্যের আলোয় ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করা পরিবারকে ঢেকে রেখেছে বিষাদে মেঘ। সাদিয়ার দুর্ঘটনার পর থেকে মেঘে ঢাকা পরিবার কি আদৌ সকালের সোনালি রোদের দেখা পাবে!

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com