ইউরোপের দলবদল বাজারে প্রচলিত আছে, ‘আপনার অনাগত সন্তানের নাম চূড়ান্ত করার আগে তার লিঙ্গ বলে দিতে পারবেন ফ্যাব্রিজিও রোমানো!’ দলবদল সংক্রান্ত নিখুঁত সংবাদের কারণে ৩০ বছর বয়সী ইতালিয়ান সাংবাদিক সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়।একের পর এক ব্রেকিং নিউজ দিয়ে বছরজুড়েই দলবদল বাজার গরম করে রাখা এ সংবাদকর্মীর বিস্ময়কর কাজের মূলে কি জানেন? শ্রদ্ধা, হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।
ফ্যাব্রিজিও রোমানোর কাজের মূলনীতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, যা দিয়ে ফুটবলার, ক্লাব কর্মকর্তা, ফুটবল এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দারুণ একটা চক্র তৈরি করেছেন। এ সম্পর্ক দিয়ে ইতালিতে বসেই গোটা ইউরোপের খবর রাখছেন রোমানো। শ্রদ্ধার গাথুনিতে আস্থার অট্টালিকা গড়া এ ব্যক্তিই রীতিমতো প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছেন!
নিজের কাজের মূলনীতি সম্পর্কে আলোচিত এ সাংবাদিক বলেছেন, ‘শ্রদ্ধাবোধ হচ্ছে আমার কাজের অন্যতম পুঁজি। এটা দিয়ে আমি বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করি। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সঠিক সময় ও সঠিক পন্থা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, ক্লাব, ফুটবলার ও এজেন্টর মধ্যে সমস্যা তৈরি না করার বিষয়টি।’ ইতালির এক ওয়েবসাইটে লেখালেখি দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু।
৬ মাস কাজ করার পর বার্সেলোনা থেকে এক ফুটবল এজেন্টের কল পান ১৮ বছর বয়সী তরুণ রোমানো। ওই এজেন্ট বলছিলেন, ‘আমি একাধিক তরুণ খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আপনি তাদের নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করার মাধ্যমে আমাকে সহায়তা করতে পারেন।’ দুজন খেলোয়াড় ছিলেন মাউরো ইকার্দি ও জেরার্ড দেউলোফো। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ইকার্দি তখন ইতালিয়ান ক্লাব স্যাম্পাদরিয়ায় খেলেন।
ট্রান্সফার উইন্ডোর বাইরে নভেম্বরে রোমানো খবর পান, ইন্টার মিলানের সঙ্গে ইকার্দির চুক্তি পাকা হয়ে গেছে। দুই মাস পরই শীতকালীন দলবদল বাজার খুলবে। কিন্তু এজেন্ট নিশ্চিত করেন, শীতকালীন দলবদল নয়, ইকার্দি মিলানের জায়ান্টদের তাঁবুতে যাবেন গ্রীষ্মকালীন দলবদলে। ওটাই ছিল রোমানোর প্রথম বড় কোনো খবর, যা প্রকাশ করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এ সাংবাদিককে।
‘এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আমার মনে ধরল। আমার দৃষ্টিতে, দলবদল বাজার হচ্ছে একটা জঙ্গলের মতো। এখানে প্রতিদিনই অপ্রত্যাশিত কিছুর মুখোমুখি হবেন। এ বিষয়টা আমার ভালো লাগে’—বলছিলেন স্কাই ইতালিয়ায় কাজ করা রোমানো। দলবদল বাজারে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এ সাংবাদিক বলেন, ‘আমার কাছে এটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবল খেলার মতো বিষয়। বড় ধরনের একটা নিউজ ব্রেক করার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করার মতো অনুভূতি হয়।’
এক যুগের বেশি বয়সী সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারে ফ্যাব্রিজিও রোমানো নিজেকে বিস্ময়কর আস্থা ভাজন হিসেবে ফুটবল দুনিয়ায় তুলে ধরেছেন। এ কারণে বলা হয়, ‘দলবদল বাজারে কী চলছে আপনি যদি তা জানতে চান, তবে ফ্যাব্রিজিও রোমানোর টুইটার কাউন্ট রিফ্রেশ দিন!’ টুইটারে প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ অনুসারী রয়েছে এ সাংবাদিকের। ফেসবুকে তার অনুসারীর সংখ্যা ১ কোটির বেশি। ফ্যাব্রিজিও রোমানো এমনিতেই বেশ পরিশ্রমী। দলবদল চলাকালে দিনে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান। ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল ফোন হাতে নেন। দিনভরই চলে বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কল ও খুদে বার্তা বিনিময়।
এ সম্পর্কে রোমোনো বলেছেন, ‘তথ্য সংগ্রহ করাটা চলমান প্রক্রিয়া। এ জন্য প্রতিদিনই আপনাকে বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। কোন তথ্য ও সংবাদকে গুরুত্ব দেবেন—সেটা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে।’
দলবদল বাজার গরম করা রোমানোর দুর্দান্ত সব খবরের অন্যতম উৎস ফুটবল এজেন্টরা। মক্কেলকে দলবদল বাজারে আকর্ষণীয় পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে নিজে থেকেই অনেক এজেন্ট নানা তথ্য নিয়ে এগিয়ে আসেন। এভাবে পাওয়া তথ্য ছাঁকনির মাধ্যমে পরিশোধন করার ওপর নির্ভর করবে আপনার কর্মদক্ষতা ও বিশ্বস্ততা। যে জায়গায় রোমানো প্রায় নিখুঁত!