
বিপুল অর্থ ফুটবলারদের জীবন বিলাসী করে তুলছে; আবার এ খেলার কল্যাণে মিলছে খ্যাতি-যশ। নিজেদের দক্ষ করে তুলতে ফুটবলারদের নিয়মিত নানা শারীরিক কসরতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটিই নাকি সাধারণ মানুষের তুলনায় ফুটবলারদের আয়ু কিছুটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি সুইডেনে ‘ল্যানসেট পাবলিক হেলথ’ পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন এমনটাই জানাচ্ছে। তবে সেই গবেষণাতেই প্রকোশ পেয়েছে— ফুটবলের কারণেই আবার খেলোয়াড়দের মাঝে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
১৯২৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিচালিত দীর্ঘ গবেষণায় সুইডেনের টপ লিগে খেলা ৬ হাজারের বেশি পুরুষ ফুটবলারের মেডিকেল রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফুটবলারদের সেই রিপোর্টগুলোর সঙ্গে ৫৬ হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক সাধারণ সুইডিশ নাগরিকের মস্তিষ্ক সংক্রান্ত ব্যাধির তুলনা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় ফুটবলারদের মস্তিষ্কসংক্রান্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১.৫ শতাংশ বেশি। গোলরক্ষকদের তুলনায় এ হার অবশ্য মাঠের ফুটবলারদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ করা গেছে। কারণ তারা খেলার অংশ হিসেবে প্রায়ই হেড (বলের সঙ্গে মাথার সংযোগ) করে থাকেন নিয়মিত।
গবেষণা প্রতিবেদনটি বলছে—মাথার ব্যবহারের কারণে ফুটবলারদের আলঝেইমার ও স্নায়ু সংক্রান্ত নানা জটিলতা বেশি লক্ষ করা যায়, যার অন্যতম হলো ডিমেনশিয়া। ডিমেনশিয়া নির্দিষ্ট কোনো রোগ নয়; ডিমেনশিয়া শব্দ দিয়ে কোন কিছু মনে রাখা, চিন্তা করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো মস্তিষ্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো বোঝানো হয়।
সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের গবেষণাটির প্রধান পিটার উয়েদা বলেছেন, ‘পরিচালিত অনুসন্ধান এটাই প্রমাণ করে যে, ক্রমাগত বলে হেড দেওয়ার কারণে মস্তিষ্কজনিত নানা জটিলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ফুটবলারদের।’
গবেষকরা এটা নিশ্চিত করেছেন যে, ফুটবল খেলার কারণে সরাসরি ডিমেনশিয়া হওয়ার মতো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উন্নত সরঞ্জাম, আধুনিক প্রশিক্ষণ পেশাদার খেলোয়াড়দের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। পিটার উয়েদা বলেছেন, ‘ভালো করার তাগিদে শিশু বয়সেই খেলাটির সংস্পর্শে আসছে ফুটবলাররা; যা তাদের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বয়স্ক ব্যক্তিদের মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক গিল লিভিংস্টোন বলেছেন, ‘মানুষের মাথা এবং মস্তিষ্ক রক্ষার জন্য আমাদের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে; চালিয়ে যেতে হবে খেলাধুলাও। দুটি বিষয়ে সমন্বয় করতে পারলে ঝুঁকি কমবে।’
যদিও রাগবি খেলোয়াড়দের তুলনায় ফুটবলারদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অবশ্য অনেক কম। সাবেক আন্তর্জাতিক রাগবি খেলোয়াড়দের মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। সাধারণ মানুষের তুলনায় যা ১৫ শতাংশ বেশি। মোটর নিউরন এমন এক রোগ, যা নার্ভ সিস্টেমকে ক্রমেই ধ্বংস করে দেয়। ঝুঁকির বিষয়টি সম্প্রতি রাগবি ইউনিয়ন ও রাগবি লিগ নিয়ে আলোচনায় ঝড় তুলেছে। সাবেক রাগবি খেলোয়াড়দের একটি দল সম্প্রতি স্থায়ী আঘাত থেকে খেলোয়াড়দের রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে বিভিন্ন পরিচালনা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে চলেছেন।