
নারী ফুটবলসংশ্লিষ্টরা অন্তরে ক্ষোভের আগুন বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটল গোলাম রাব্বানীর প্রধান কোচের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণায়। নারী ফুটবলে সব অর্জনের নেপথ্য কারিগর গতকাল দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে অফিসিয়ালি বিষয়টি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) জানাবেন। বছরের পর বছর প্রধান কোচের দায়িত্ব পালনের ঝক্কির কারণে ক্লান্তি ভর করেছে—এটি গোলাম রব্বানীর দায়িত্ব ছাড়ার পোশাকি কারণ। ভেতরের খবর হচ্ছে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির খবরদারিত্ব, যা সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছে। যদিও এ সম্পর্কে গোলাম রব্বানী কিছু বলেননি।
‘দীর্ঘদিন ধরে নারী ফুটবল নিয়ে কাজ করছি। নিজের মাঝে ক্লান্তি আছে, পরিবারকে সময় দেওয়ার বিষয়টাও জরুরি। এ কারণে আমি দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অফিসিয়ালি দু-এক দিনের মধ্যে দায়িত্ব ছাড়ার বিষয়টি বাফুফের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানিয়ে দেব’—কালবেলাকে বলছিলেন গোলাম রব্বানী। নারী ফুটবল দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পল স্মলির খবরদারিত্ব বাড়ছে। কোচিং স্টাফদের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। বিপরীতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে না। মে মাস শেষ হতে চলছে, অথচ এপ্রিলের বেতন এখনো পাননি কোচিং স্টাফরা।
নারী ফুটবল দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলাকে বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানিয়েছে, নানা হতাশার কারণে একাধিক কোচিং স্টাফ গোলাম রব্বানীর পথে হাঁটার চিন্তাভাবনা করছেন। সাবিনা-কৃষ্ণাদের প্রধান কোচের দায়িত্ব ছাড়লেও ফুটবলাঙ্গন ছাড়ছেন না ২০০৯ সাল থেকে নারী ফুটবল নিয়ে কাজ করা গোলাম রব্বানী, ‘নারী জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়লেও কোচিংয়েই থাকব। ক্লাব কোচিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’ সাতটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতা এ কোচ আরও বলেন, ‘ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আগে আমার বিশ্রাম প্রয়োজন। বিশ্রাম নেব, পরিবারকে সময় দেব।
তারপর পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে ভাবতে চাই।’ গোলাম রব্বানীর দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণার দিনে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নারী জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সিরাত জাহান স্বপ্না। গতকাল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজ ইচ্ছায় পেশাদার ফুটবল থেকে বিদায় নিলাম। প্রায় আট বছর পেশাদার ফুটবল খেলার সৌভাগ্য হয়েছে। ফুটবল থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি।
’ নারী ফুটবলের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। গত বছর নেপালে ঐতিহাসিক শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন দীর্ঘকায় ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না। আসরে চার গোল করা এ ফুটবলার অবসর ঘোষণা দেওয়া পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘খেলার সুবাদে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাই জেনে বা না জেনে যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি প্লিজ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।’ নারী দলসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বুধবার পারিবারিক জরুরি কাজের কথা বলে জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে দুই দিনের ছুটি নিয়েছেন সিরাত জাহান স্বপ্না।
ছুটি শেষে শনিবার তার ক্যাম্পে ফেরার কথা। কিন্তু ফেসবুক পোস্টে জানিয়ে দিলেন—ক্যারিয়ারটা আমি আর দীর্ঘ করতে চাই না। স্বপ্নার এমন ঘোষণার মূলে ছিল হতাশা। নারী দলসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাফ জয়ের পর থেকে ধারাবাহিক অনুশীলনে থাকলেও মেয়েরা খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। ভারত ও নেপাল দল এরই মধ্যে ৭-৮টি ম্যাচ খেলেছে। বিপরীতে কোনো ম্যাচ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তা। এ কারণে স্বপ্নার এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। স্বপ্নার মতো হতাশা ভর করেছে আরও একাধিক ফুটবলারের মাঝে।