দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটার। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রায় একই সময়ে শুরু হয় তাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। আবার প্রায় একই সময়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন দুজন। কিন্তু ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরে খেলেছেন দুজন।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব বলা হয় তাদের। কিন্তু মাশরাফী, সাকিব আর তামিমের মতো ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয় মুশফিক আর রিয়াদের। পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে দুজনের বিপিএল রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। দুই ভায়রা ভাই, ফাইনাল খেলেছেন দুবার করে। কিন্তু প্রতিবারেই তাদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। তাই প্রশ্ন উঠেছে রিয়াদ এবং মুশফিক, অপয়া নাকি ভাগ্যহীন।
বিপিএল মাশরাফী ও সাকিবের জন্য যতটা সৌভাগ্যের, মুশফিক ও রিয়াদের জন্য ততটাই দুর্ভাগ্যের। পাঁচবার ফাইনালে খেলে চারবার শিরোপা জিতেছেন মাশরাফী। আর আর দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সাকিব। অন্যদিকে শিরোপা জয় তো দূরের কথা দুবার করে ফাইনালে খেলাই দুই ভায়রা ভাইয়ের একমাত্র সাফল্য।
এখন পর্যন্ত বিপিএলে সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক মাশরাফী। ঢাকার হয়ে প্রথম দুই আসরে শিরোপা জেতেন তিনি। তখন অনেকই বলেছিল, দারুণ স্কোয়াড পাওয়ায় শিরোপা জিতেছেন মাশরাফী। কিন্তু কাগজে-কলমে সাদামাঠা দল গড়ে মাশরাফীর অধিনায়ত্বের গুণ শিরোপা জেতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। রংপুরের জার্সিতেও শিরোপা জেতেন তিনি।
প্রায় একই কথা প্রযোজ্য সাকিবের ক্ষেত্রেও। বিপিএলের ফাইনালে খেলেছেন চারবার। এর মধ্যে শিরোপা উৎসব করেছেন দুবার। অন্য দুবার হেরে যান শিরোপার লড়াইয়ে। দুই শিরোপার একটা আবার জিতেছেন অধিনায়ক হিসেবে। দল যেমনই করুক বিপিএলজুড়ে সবসময় আলো ছড়ান সাকিব। সর্বাধিক ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কার জেতা এর বড় প্রমাণ।
মুশফিকের ভাগ্যটাও এতটা সুপ্রসন্ন না। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) ক্রিকেটে মোহামেডানে যোগ দিয়েও ধারে সেই মৌসুমে শেখ জামালের খেলেন মুশফিক। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় শেখ জামাল। এই একটা শিরোপা ছাড়া কোনো ট্রফি জয়ের মঞ্চে উঠতে পারেননি তিনি। বারবার ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলালেও ভাগ্য বদলাতে পারেননি মুশফিক। ২০১৯ সালে বিপিএলের সপ্তম আসরে খুলনা টাইগার্সের হয়ে প্রথমবার ফাইনালে খেলেন তিনি। কিন্তু জেতা হয়নি শিরোপা। এবার টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে। ব্যাট হাতে ৪৮ বলে ৫ চার আর ৩ ছক্কায় করেন ৭৪ রান। কিন্তু কুমিল্লার ৭ উইকেটের বড় জয়ে আবারও শিরোপা বঞ্চিত হন মুশফিক।
অনেকটা একই চিত্র মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ২০১৩ সালে প্রথম বিপিএল খেলেন তিনি। নিজের প্রথম আসরে ফাইনালে খেলেন তিনি। কিন্তু মাশরাফীর ঢাকার কাছে হেরে যায় মাহমুদউল্লাহর চট্টগ্রাম। এবার নিজেদের ভাগ্য বদলের চেষ্টায় বাঁকবদল করেন মুশিফক ও রিয়াদ। নিজেদের শিরোপা জেতার অপূর্ণতা ঘোচাতে যোগ দিয়েছেন বিপিএলের সফল দুই অধিনায়কের সঙ্গে। রিয়াদ খেলেছেন সাকিবের ফরচুন বরিশালে। আর সিলেটে মাশরাফীর সঙ্গী হন মুশফিক। মুশি-রিয়াদের ভাগ্যের বদল হলো না এবারও। বরং তাদের দুর্ভাগ্য ভর করে সাকিব-মাশরাফীর ওপর। এলিমিনেটরে রংপুরের কাছে হেরে বাদ পড়ে বরিশাল। আর ফাইনালে কুমিল্লার কাছে হেরে আবারও শিরোপা বঞ্চিত হন মুশফিক। এখন মুশি-রিয়াদের শিরোপা জয়ের আক্ষেপ মেটাতে অপেক্ষা করতে হবে আরও একটি বছর।