বাফুফের অর্থ কেলেঙ্কারিঃ থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন এক মাসের ছুটি নিলেও গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া। তিন মাস পর দেশে ফেরায় জানা গেলো কানাডায় অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তিনি
গেল বছর বিশ্ব ফুটবল সংস্থা বার্ষিক অনুদান হিসেবে বাংলাদেশকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করেছে। কাতার বিশ্বকাপে বিপুল মুনাফার সুফল হিসেবে ভবিষ্যতে অনুদানের অঙ্কটা বড় হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অনুদানের পাশাপাশি বিভিন্ন উৎস থেকে নিয়মিতই অর্থ আসছে। বিপুল অর্থ প্রবাহের পরও বদলাচ্ছে না দেশের ফুটবলের রুগণ চেহারা। যার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে দুর্নীতিকে।
এ জন্য অতীতে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ শিরোনামে এসেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বিভিন্ন কর্মকর্তা। সম্প্রতি ক্রয়-সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে ফের আলোচনায় স্থানীয় ফুটবল সংস্থার তিন কর্মকর্তা। ফিফা যাদের কারণ দর্শাতে বলেছে, তাদের অন্যতম প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন। ফিফার সমন মাথায় নিয়ে দেশান্তরী হওয়ার সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন এ কর্মকর্তা।
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পুরোনো। অতীতে বিভিন্ন সময় নয়-ছয়ের ঘটনায় সংবাদ শিরোনামে এসেছে তার নাম। হিসেবের জটিল অঙ্কেও আটকেছেন এ কর্মকর্তা; যেতে হয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফিফা সাম্প্রতিক নোটিশ। যে কারণে নজরদারিতে আছেন আবু হোসেন। দুদক-ফিফার ঝক্কি এড়াতে প্রবাসে পাড়ি জমানোর পথ খুঁজছিলেন। এরই মধ্যে সে ব্যবস্থা করেও নিয়েছেন।
দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে এক মাসের ছুটি নিয়েছিলেন আবু হোসেন। কাগজপত্রে অবশ্য থাইল্যান্ডের কথা উল্লেখ করেন। ছুটি নিয়ে এ কর্মকর্তা দেশের বাইরে গিয়েছিলেন ঠিকই। গন্তব্য থাইল্যান্ড নয়, ছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। পরিবার নিয়ে ভিক্টোরিয়া প্রদেশের রাজধানীতে তিন মাস কাটিয়েও আসেন। আসলে তার এ সফর চিকিৎসার জন্য নয়, ছিল অভিবাসী হওয়ার প্রচেষ্টা। এক মাসের ছুটি নিয়ে আবু হোসেন ফিরেছিলেন তিন মাস পর! তার অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রসেস করেছে রাজধানীর গুলশান ২-এ অবস্থিত ভিসা গ্লোবালে এক্সপ্রেস নামের এক প্রতিষ্ঠান।
‘বিশ্বজুড়ে করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরই আবু হোসেন সাহেব ও তার পরিবারের সদস্যদের ভিসার কাগজপত্র আমরা প্রসেস করেছি। অভিবাসন সংক্রান্ত কাজগুলো প্রসেস করেছে বিদেশি এক সংস্থা। অভিবাসনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর আবু হোসেন সাহেব ও তার পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ায় চলেও গিয়েছিলেন’— কালবেলাকে বলছিলেন ভিসা এক্সপ্রেস গ্লোবালের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা জুয়েল ডি কস্তা।
সূত্র জানিয়েছে, বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেনের সন্তানরা অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। স্ত্রী নিয়ে তিনিও পাড়ি জমিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় যে কোনো সময় দেশ ছাড়তে পারেন বিগত কয়েক বছর ধরে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এ কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, আবু হোসেনের সহকারী (বাফুফের অর্থ সহকারী) অনুপম সরকারও নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। এ কর্মকর্তা বাফুফের চাকরির মাধ্যমেই বাড়ি-গাড়ি করেছেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।