
হজের মৌসুমে মুসলিমবিশ্ব জুড়ে শুরু হয় বিশেষ আয়োজন। এ প্রস্তুতিতে যেমন দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্কদের, তেমনিভাবে অপ্রাপ্ত বয়সীদেরও দেখা যায়। যাদের ওপর ইসলামী শরিয়তের কোনো বিধানই অর্পিত নয়। তা সত্ত্বেও তাদের সৌভাগ্য হয় হজ পালনের।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাওহা নামক স্থানে একদল আরোহীর সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাৎ হলো। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারা জিজ্ঞাসা করল, আপনি কে? রাসুল (সা.) বললেন, আমি আল্লাহর রাসুল। এরপর এক মহিলা নবীজির (সা.) সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞাসা করল, এর জন্য হজ আছে কি? নবীজি (সা.) বললেন, হ্যাঁ এবং এতে তোমার জন্য সওয়াব রয়েছে। (মুসলিম : ৩১৪৪)। ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আমার পিতা আমাকে নিয়ে বিদায় হজে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজ করেছেন। আমার বয়স তখন সাত বছর ছিল। (তিরমিজি : ৯২৮) এসব হাদিসের আলোকে আলেমরা বলেন, হজ মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর ফরজ হলেও শিশুদের জন্যও পালন করা জায়েজ। নামাজ-রোজা যেমন শিশুদের ওপর ফরজ না হওয়া সত্ত্বেও পালন করলে সওয়াব হয়, তদ্রূপ শিশুরা হজ পালন করলেও সওয়াব হয়। শিশুদের পালনকৃত হজ নফল হজ হিসেবে গণ্য হবে। শিশু অবস্থায় পালনকৃত হজ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ফরজ হজের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যদি হজ ফরজ হয় তাহলে তাকে পুনরায় হজ আদায় করতে হবে। সাধারণত হজের যেসব করণীয় রয়েছে তা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে কিছু বিষয়ে শিশুদের জন্য শিথিলতা রয়েছে। শিশু যদি একেবারে বিবেকবুদ্ধিহীন হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে তার বাবা-মা ইহরামের নিয়ত করবে এবং তার পক্ষ থেকে তার বাবা-মা হজের সব কার্যক্রম সম্পাদন করবে। তবে যথাসাধ্য তাদের ইহরামপরিপন্থি সব বিষয় থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে এবং তাওয়াফ চলাকালীন তাদের কাপড় ও শরীর পবিত্র রাখারও চেষ্টা করবে। তা সত্ত্বেও যদি তাদের থেকে ইহরামপরিপন্থি কোনো কাজ প্রকাশ পায়, তাহলে তাদের বা বাবা-মা কারও ওপর দম ওয়াজিব হবে না তথা পশু কোরবানি করতে হবে না। আর শিশু যদি বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন হয়, তাহলে তার ইহরাম সে নিজেই বাঁধবে। সেইসঙ্গে যেসব বিষয়ের প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক ইহরাম পরিহিতরা যত্নবান থাকে, সেসব বিষয়ের প্রতি যত্নবান থাকবে। তদ্রূপ যেসব কাজ সে নিজে সম্পাদন করতে সক্ষম, সেসব কাজ সে নিজেই সম্পাদন করবে। চাই শিশু বিবেকবুদ্ধিহীন হোক বা বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন হোক। যেমন আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, মুজদালিফায় রাত্রিযাপন করা ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, যেসব কাজ সে নিজে করতে সক্ষম নয় তা বাবা-মা তার পক্ষ থেকে আদায় করতে পারবে। যেমন, পাথর নিক্ষেপ করা। হজরত জাবের (রা.) বলেন, আমরা যখন রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজ করি, তখন আমরা শিশুদের পক্ষ থেকে পাথর নিক্ষেপ করেছি। (তিরমিজি : ৯৩৭)। তবে এ ক্ষেত্রে বাবা-মা প্রথমে তাদের নিজেদের হজকার্য সম্পাদন করবে। অতঃপর শিশুদের পক্ষ থেকে আদায় করবে। l নাজিম উদ্দিন