মানুষ মরিয়া হয়ে নেমে আসে রাজপথে

মানুষ মরিয়া হয়ে নেমে আসে রাজপথে

আজ ১৮ মার্চ। একাত্তরের এই দিনে সরকারি-বেসরকারি অফিসে অনুপস্থিতির হার আরও বেড়ে যায়। দলে দলে মানুষ যোগ দিতে থাকে মুক্তির মিছিলে। স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ছাত্র-শ্রমিক-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ মুক্তির স্লোগানে ঢাকার রাজপথকে আবার নতুন করে প্রকম্পিত করে তোলে।

এদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শপথদীপ্ত ছাত্র, যুবক, নার্স, ব্যাংক কর্মচারী, নার্সিং স্কুল, কলেজের ছাত্রী, ট্রাক ড্রাইভারসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মিছিলসহ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে সমবেত হন এবং প্রিয় নেতার প্রতি অকুণ্ঠ আস্থা জ্ঞাপন করেন। সারা দিন ধরে আনাগোনাকারী বিদেশি সাংবাদিক এবং এসব মিছিলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বঙ্গবন্ধু আবেগ ভরা কণ্ঠে বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা দেখুন, আমার দেশের মানুষ আজ প্রতিজ্ঞায় কী অটল, সংগ্রাম আর ত্যাগের মন্ত্রে কত উজ্জীবিত, কার সাধ্য এদের রুখে? আমার দেশ আজ জেগেছে। স্বাধীনতার জন্য জীবনদানে অগ্নিশপথে দীপ্ত জাগ্রত জনতার এ জীবন জোয়ার এবং এ প্রচণ্ড গণবিস্ফোরণকে স্তব্ধ করতে পারে এমন শক্তি আজ আর মেশিনগানেরও নাই।’

আগত মিছিলকারীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাষণ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলার মানুষ তোমরা ঘরে ঘরে সংগ্রাম দূর্গ গড়ে তোলো। আঘাত যদি আসে, প্রতিহত করো, পাল্টা আঘাত হানো।’

তিনি বলেন, ‘৭ কোটি বাঙালির সার্বিক মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। চরম ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আমরা লক্ষ্যে পৌঁছবোই। দরকার হলে রক্ত দিয়েই আমরা দাবি প্রতিষ্ঠা করবো—তবু শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। দাবি আদায় করতেই হবে। শান্তিপূর্ণভাবে হয় ভালো, না হলে সংগ্রামের দুর্গম পথ ধরেই আমরা লক্ষ্যস্থলে পৌঁছবো।’ এদিনে (১৮ মার্চ) বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার কোনো বৈঠক ছিল না। সকালে নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খানের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। ১ ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে পশ্চিম পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বখশ উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওয়ালী খান আমার বন্ধু। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশেই আমাদের আলোচনা হয়েছে। যতদিন তিনি ঢাকায় আছেন, যে কোনো সময় আমরা আলোচনা করতে পারি।’ আগের দিন (১৭ মার্চ, বুধবার) বিগত ‘২ থেকে ৯ মার্চ’ পর্যন্ত বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সাহায্যের নামে কোন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছিল, তা তদন্তের জন্য যে কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়, তা প্রত্যাখ্যান করেন বঙ্গবন্ধু। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ হতে আমি যে তদন্তের দাবি করেছি এর পরিপ্রেক্ষিত গঠিত তদন্ত কমিশন উক্ত দাবি পূরণ করতে পারে না।’

অন্যদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো এদিন আলোচনার জন্য ঢাকায় না আসার ঘোষণা দেন। তিনি দলীয় নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর করাচিতে সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গত ১৬ মার্চ এক বাণীতে তাকে ১৯ মার্চ ঢাকায় যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন; কিন্তু তিনি কতিপয় বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। কয়েকটি প্রশ্নের জবাব পেলেও কতগুলো বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com