তোফায়েল আহমেদ
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আমার মা

আমার মা

আজ মায়ের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর সবার মায়া ত্যাগ করে তিনি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। পৃথিবীতে প্রত্যেক সন্তানের কাছে মা পরমারাধ্য। আমার জীবনেও মা প্রিয় মানুষ, শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মায়ের স্নেহ-আদর আর মমতায় বড় হয়েছি। মায়ের স্নেহরাজি আজও অন্তরে প্রবহমান। মায়ের পবিত্র মুখখানি যখনই চোখের সামনে ভেসে ওঠে, মনে হয় এখুনি মায়ের কাছে ছুটে যাই। জন্মলগ্ন থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত, প্রতিটি ধাপে মা যত্ন করে আমায় গড়ে তুলেছেন। মা ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতাম না। শৈশব আর কৈশোরের সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে দুচোখ ভিজে যায়। প্রতিবার নির্বাচনী জনসংযোগে যাওয়ার প্রাক্কালে কাছে টেনে পরমাদরে কপালে চুমু খেয়ে প্রাণভরে দোয়া করতেন মা। মমতাময়ী মায়ের সেসব কোমল স্মৃতি খুব মনে পড়ে।

আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭০ সালের ২৫ এপ্রিল। সেদিন আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল চট্টগ্রামের মিরেরশ্বরাইয়ে। বাবার মৃত্যু সংবাদ আমার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পেয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে আমাদের প্রিয় নেতা এমএ আজিজকে জানিয়েছিলেন, ‘তোফায়েলের বাবা মৃত্যুবরণ করেছেন।’ মিরেরশ্বরাইর জনসভায় এমএ আজিজ ভাইসহ যখন সভা করছি, তখন আমার বক্তৃতা শেষে আজিজ ভাই বললেন, আমি যেন অনতিবিলম্বে ভোলা চলে যাই। বিশাল সেই জনসভায় লাখো লোক জমায়েত হয়েছিল। বক্তৃতা শেষে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের ছোট ভাই বশুরুজ্জামান—যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, তার গাড়িতে চাঁদপুর পর্যন্ত পৌঁছে দেন এবং ২৬ এপ্রিল সকালবেলা গ্রামের বাড়ি পৌঁছাই। ততক্ষণে বাবার দাফন হয়ে গেছে। বাবার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় ’৭০-এর ১৭ এপ্রিল।

প্রতিবছর ভোলায় গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে তাদের স্মরণ করি। আমার বাবার নাম আজহার আলী, মা ফাতেমা খানম। আমি দাদা-দাদি, নানা-নানিকে দেখিনি। মা ১৯১৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। বাবা-মায়ের সুখের সংসার। তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে আমরা সবাই মায়ের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম।

দশম শ্রেণিতে আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন থেকে হলাম স্কুল ক্যাপ্টেন। মনে পড়ে, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক সচিব হিসেবে বরিশালে তার সফরসঙ্গী হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সব গণ্যমান্য ব্যক্তি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। প্রেজেন্টেশন লাইনে দেখি আমার স্কুলের শিক্ষক তসীর আহমেদ স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করবেন। তিনি তখন বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বললাম, বঙ্গবন্ধু, আমার স্যার। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘তুমি এখনো সালাম করো নাই।’ আমি দ্রুত তার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। পরিবার, বিশেষ করে মা, শিক্ষালয় এবং বঙ্গবন্ধুর থেকে অর্জিত এসব মূল্যবোধ দিয়েই গড়ে উঠেছে আমার জীবন ও আচরণ।

ভোলায় গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা-বাবা যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত, সেখানে কবর ফলকে হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি উৎকীর্ণ আছে এভাবে—‘মা-বাবা চলে গেছেন অনেক আগে/চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তোমারই পাশে/তুমিও চলে গেলে আমাদের/সকলকে কাঁদিয়ে,/তবুও তোমরা আছ সর্বক্ষণ/আমাদের হৃদয়জুড়ে।/মা, প্রতি মুহূর্ত তোমাদের অভাব/অনুভব করি।’/তোমার মনু (তোফায়েল)।

লেখক : আ.লীগ নেতা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দিয়ে কিডনি কেটে বিক্রি করেন মিল্টন সমাদ্দার?

গণঅধিকার পরিষদের খাবার পানি ও ফল বিতরণ

সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে মেঘনা গ্রুপে চাকরি, কর্মস্থল ঢাকা

ফের মাউশির ডিজি হলেন অধ্যাপক নেহাল

আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

স্বাস্থ্য শিক্ষার এডিজি হলেন স্বাচিপ মহাসচিব

উপনির্বাচনকে সামনে রেখে ফের উত্তপ্ত শৈলকুপা

হিটস্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চাঁদা না পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক পিটুনি

সাংবাদিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি মামলা

১০

স্ত্রীর দাবি, সালমান শাহ-শাকিবের মতোই এবার টার্গেট জয়

১১

প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু, গুরুতর অপরাধে লঘু মামলা হয়েছে

১২

বাংলাদেশের উন্নতি দেখে আমাদের লজ্জা হয় : পাক প্রধানমন্ত্রী

১৩

শাহজাদপুরে বৃষ্টি কামনায় ইসতেসকার নামাজ আদায়

১৪

চুয়েটে উপাচার্য অবরুদ্ধ, হল না ছাড়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

১৫

শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ৬০ বছরের বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

১৬

নাভালনির শেষকৃত্য করা সেই পুরোহিতকে চরম শাস্তি

১৭

চরমোনাই পীরের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা 

১৮

গাজীপুর ওয়ালটন এসি কিনে মিলেনিয়র হলেন স্যানিটারি ব্যবসায়ী

১৯

শূন্য রানে ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড

২০
*/ ?>
X