অজয় দাশগুপ্ত
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:২২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অহংকারের স্বাধীনতা কোথায়

অহংকারের স্বাধীনতা কোথায়

স্বাধীনতা দিবসের খুব একটা দেরি নেই। আবার এই মার্চ মাসেই বঙ্গবন্ধু তার জীবনের সেরা ভাষণটি দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে মার্চ একটি জ্বলন্ত ইতিহাসের মাস। সেই মাসে আমাদের সমাজে নানাবিধ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে। ঢাকায় আগুন, সুলতা’স ডাইনে কুকুরের মাংস এবং ১১ কোটি টাকা লুট। কোনটা রেখে কোনটা বলি? সব মিলিয়ে অস্থির হওয়ার মতো পরিবেশ। আমরা দূরে থেকেও তা টের পাই। প্রধানমন্ত্রী কাতার সফর শেষে যে সংবাদ সম্মেলন করলেন, তাতে স্পষ্ট করে বলেছেন–ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু আলাপ বা সংলাপের বিষয়টিও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। মান-অপমান-রাগ বিষয়ে ন্যায্য কথা বলেন বলে তার সুনাম আছে। তবু আমরা চাই আলাপ হোক। সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক। তা না হলে তার নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশই পড়বে বিপাকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ষড়যন্ত্র বহমান। তাকে রুখতে না পারলে স্বাধীনতার মূল স্বপ্নই ব্যর্থ হয়ে যাবে।

বিষয়টা এমন হয়ে গেছে, দেখবেন-শুনবেন-মানবেন কিন্তু বলতে পারবেন না। বলতে গেলেই নানা বিপদ। কথা হচ্ছে, যদি বলার মতো কিছু না হতো, কে বলত? কারা বলত? বলছি রাজনীতিহীন সমাজের রাজনৈতিক হালচালের কথা। এখন যারা ভোটে দাঁড়ান বিশেষত সরকারি দলের হয়ে, তাদের জীবনে পরাজয় বলে কিছু নেই। যেভাবেই হোক জিতে বেরিয়ে আসে তারা। এই জয় কতটা ন্যায্য আর কতটা গ্রহণযোগ্য, তা জানলেও বলা যায় না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এটা তার দুশমনরাও স্বীকার করেন। বঙ্গবন্ধু আজীবন যে সংগ্রাম করে গেছেন তার মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র। সে গণতন্ত্র কতটা আছে বা নেই, সে প্রশ্নও তোলা যায় না। সংবাদপত্র কিংবা মিডিয়ার কাজ হচ্ছে সত্যকে সত্য হিসেবে তুলে ধরা। এই তুলে ধরার কাজটি কতভাবে ব্যাহত হচ্ছে তার হিসাব কি আমরা রাখি? এই যে কথায় কথায় বলছি, শ্রীলঙ্কা হবে না–সেটা কীসের জোরে? বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে–এমন ভাবি না। তবে দুঃস্বপ্ন বাস্তবতার চেয়েও ভয়ংকর। রাজাপাকসের পরিবার সে দেশটিতে ঝাঁকিয়ে বসেছিল। তামিল হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের পর খ্রিষ্টান এবং মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করে সে দেশে সিংহলিদের একক আধিপত্য কায়েমের সময়কালে রাজাপাকসেরা ছিলেন পপুলার। কারণ উগ্র জাতীয়তাবাদের এটাই ধারা। একসময় হিটলারও সাংঘাতিক পপুলার ছিলেন। কিন্তু আখেরে কি হলো? আজ প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে কূল পাচ্ছেন না। জনরোষে ছাই হয়ে গেছে তাদের বাড়িঘর।

বাংলাদেশে সে পরিস্থিতি তৈরি করার মতো শক্তি ওতপেতে আছে। তারা দেশ-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেশের চেয়েও বিদেশে এদের দাপট আর লম্ফনের কারণ, সেখানে দেশের আইন বা পুলিশ নেই। কিন্তু সব সময় আইন আর পুলিশের দরকার পড়বে কেন? রাজনীতি যদি সুষ্ঠু ধারায় চলে এবং জনগণের মনের কথা বুঝতে পারে, সমস্যা হওয়ার তো কথা নয়। শেখ হাসিনার পপুলারিটি আর ইমেজের তলায় চাপা পড়া সরকারের বাকিরা কী করছেন? জনগণের দোরগোড়ায় যারা, তাদের কথা আসবে সবার আগে। তারা কি আসলেই জনগণের মনের ভাষা পড়তে পারেন? ইউনিয়ন লেভেলের কথা না হয় বাদই দিলাম। যখন মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো সামনে আসে তখন নিশ্চয়ই জনগণ এমন প্রার্থী চান, যার ইমেজ হবে ক্লিন। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোনো দল আছে যারা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে, তাদের সব নেতা বা প্রার্থীর ইমেজ ক্লিন? সেটা যদি না পারেন তাহলে প্রশ্নকে ভয় পাওয়া কেন? খবরে দেখলাম মাদক সংক্রান্ত খবর ছাপার পর ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা ঠুকেছেন। এটা তিনি করতেই পারেন। কিন্তু এই মামলা ঠুকলেই কি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যাবে? কারণ এই মানুষটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এর আগেও হয়েছে। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল তাতে তার নাম ছিল। নিশ্চয়ই সে তালিকা কোনো সংবাদপত্র বা মিডিয়া করেনি। তাহলে বিচার চাওয়াটা খালি মিডিয়ার বিরুদ্ধে কেন?

এটা বলা যায়, এতে প্রার্থীর হয়তো কিছুই হবে না। কারণ ভোট গণনা বা রেজাল্ট কীভাবে হয় বা কারা করেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভরশীল। আপাতত আমরা যা দেখছি, সহজ টার্গেট হলো মিডিয়া। এর কারণ বোঝা কঠিন কিছু নয়। মানুষের মুখ নানা কারণে বন্ধ। মানুষের মনে চাপের অন্ত নেই। কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে আর অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের অবস্থা জটিল। দেশে কথা হলেই বুঝতে পারি হালহকিকত আর বাইরের চিত্র এক নয়। হিমশিম খাওয়া মানুষের ঘাড়ে দুটি মাথা নেই যে, মুখ খুলবে। যা অল্প বিস্তর বলে তা মিডিয়াই বলে। এখন ছলে বলে কৌশলে যদি তাদের মুখ বন্ধ করা যায় তো তাহলেই রাস্তা পরিষ্কার। আমরা যেমন জানি, মাদক চোরাচালান বা অবৈধ আয়ের কথা শীর্ষ নেতারাও জানেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কদিন আগেই বলেছিলেন এদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। যদিও ইয়াবা বদি নামে একজন সে কবে থেকে বহাল তবিয়তে আছে এবং থাকবে।

বলছিলাম শ্রীলঙ্কার কথা। যারা ভাবছেন সেদেশে শুধু অভাব আর নীতিহীনতার কারণে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তারা ভুল ভাবছেন। এর পেছনে সামাজিক অসন্তোষও একটা বড় কারণ। খবরে নিশ্চয়ই দেখেছেন মাহিন্দা রাজাপাকসের লোকজন মাঠে নামার চেষ্টা করেছে। ঠিক এরশাদ আমলের মতো। সেসব ভাড়াটিয়া বাহিনী টেকেনি। তারা মার খেয়ে পালিয়েছে। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। কিন্তু ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আজকে বাংলাদেশের যেসব ঘটনা দেশ-বিদেশ তোলপাড় করে তোলে তার বেশিরভাগই কিন্তু টাকা পাচার, মাদক ব্যবসা আর নারী সংক্রান্ত। এই তিনটির একটিও দাপটহীন কোনো ব্যক্তি করতে পারে না। যারা করে তারা হয় নেতা, নয়তো নেতার আশীর্বাদপুষ্ট। এ সত্যটা জানার পরও আমরা যাদের মামলা বা হামলা দিয়ে জোর খাটিয়ে নিজের সাধুতা প্রমাণ করতে দেখি, তাদের জন্য আজ কেউ কেউ বিপদে পড়লেও একদিন দলই হয়তো পড়বে ঘোর বিপদে।

আমরা বিশ্বাস করি এবং করব, জনগণের চেয়ে বড় কোনো উৎস নেই। জনগণ আওয়ামী লীগের ভিত্তি ছিল এবং থাকবে। সে জায়গাটা যারা নষ্ট করেছে তাদের কী হাল, সেটা বিএনপির দিকে খেয়াল করলেই বোঝা সম্ভব। আজকাল তাদের সিনিয়র নেতাদের কথা শুনলে মনে হবে পাগলের প্রলাপ। ভালো করে খেয়াল করলে বুঝবেন দীর্ঘকাল রাজপথহীন ক্ষমতাহীন থাকাতেই তাদের অনেকের মানসিক বা স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটা সরকারি দলের বেলায়ও প্রযোজ্য। বলাবাহুল্য, এর কারণ জনবিচ্ছিন্নতা আর ওভার প্রাউড। এই দম্ভ কোনোকালে কারও মঙ্গল ডেকে আনতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা হলো কোনো জাতি বোবা, কালা বা অন্ধ হয়ে বাঁচতে পারে না। উন্নতিও করতে পারে না। তাই সুষম বিকাশ আর উন্নয়ন টেকানোর জন্য এখন থেকে বলা কম, হজম শক্তি বেশির দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। একই সঙ্গে কিছু বললেই মামলা-হামলার দিকে মনোযোগী হওয়ারও দরকার নেই। বরং জনগণকে সঙ্গে রাখলে তারাই বলে দেবে কোনটা সাদা কোনটা কালো।

মিডিয়ার স্বাধীনতায় দেশ ও সমাজ নিরাপদ–এই সত্য মানতেই হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। সিডনি প্রবাসী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তীব্র গরমে বিশ্বজুড়ে বছরে ১৮৯৭০ শ্রমিকের মৃত্যু

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ

যুদ্ধের মধ্যেই মন্ত্রীকে আটক করলেন পুতিন

সকালে ইসতিসকার নামাজ আদায়, রাতে নামল স্বস্তির বৃষ্টি

তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা

অফিসার নিয়োগ দেবে কাজী ফার্ম, আবেদন করুন দ্রুত

হিট স্ট্রোকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যু

অন্তঃসত্ত্বা নারীর চিকিৎসা করলেন না ডাক্তার, সমালোচনার ঝড়

টাইগারদের সঙ্গে সিরিজের জন্য জিম্বাবুয়ে দল ঘোষণা

থাইল্যান্ড পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

১০

চাকরি দিচ্ছে কাজী ফার্মস, নেই বয়সসীমা

১১

কালবেলায় প্রতিবেদন প্রকাশ / ভূমিদস্যু কামরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১০ আইনজীবীর আবেদন 

১২

আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

১৩

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে / হঠাৎ ইরান সফরে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দল

১৪

ল্যাবএইড হাসপাতালে চাকরির সুযোগ, ৪৫ বছরেও আবেদন

১৫

ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই গ্রেপ্তার

১৬

৪ বছরের ছেলেকে ৪১ বার ছুরিকাঘাত করেন মা

১৭

দুর্নীতি মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন

১৮

হারে মোস্তাফিজের দায় দেখছেন না চেন্নাই অধিনায়ক

১৯

দ্রুত গলছে হিমবাহ, হ্রদের আয়তন বাড়ছে হিমালয়ে

২০
*/ ?>
X