
শারীরিকভাবে সক্ষম ও আর্থিকভাবে সচ্ছল প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। যথাযথ নিয়ম মেনে পবিত্র হজ পালন করলে হাজিরা নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফেরেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করেছে এবং অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ থেকে ফিরবে সেদিনের মতো নিষ্পাপ অবস্থায়, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন।’ (বুখারি : ১৫২১)। অর্থাৎ সে কবিরা-সগিরা, প্রকাশ্য-গোপনীয় সব গুনাহ থেকে ওইরূপ মুক্ত হয়ে ফিরে আসে, যেরূপ একজন শিশু গুনাহমুক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে। হজে রয়েছে আরও অনেক প্রাপ্তি।
দোয়া কবুল হয় : প্রতিটি মানুষেরই মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি অনেক চাওয়া ও দাবি থাকে। হজ করলে মানুষ আল্লাহর কছে দোয়া কবুলের সুযোগ লাভ করে। জাবির (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাহকারীরা আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দোয়া করলে তাদের দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদের তা দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে বাজ্জার : ১১৫৩)।
খরচে বহুগুণ প্রতিদান : জীবনে একবারই হজ ফরজ হয়। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তির ওপরই হজ ফরজ। হজে গিয়ে যে সম্পদ খরচ করা হয়, তার বিনিময় বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হজের জন্য খরচ করা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার মতোই, যার সওয়াব সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৩০০০)।
দরিদ্র ও গোনাহ দূর হয় : হজে সম্পদ ব্যয় হয়। কিন্তু এতেই মুমিন লাভ করে প্রভূত কল্যাণ। পরকালীন কল্যাণ তো আছে, জাগতিক কল্যাণও অর্জিত হয়। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখো (অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে করো)। কেননা এ দুটি মুমিনের দারিদ্র্য ও গোনাহগুলো দূর করে দেয়, যেমন (কামারের আগুনের) হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়।’ (তিরমিজি : ৮১০)।
তাওয়াফের ফজিলত : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে ও শেষে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, সে যেন একটি গোলাম আজাদ করল।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস নং ২৯৫৬)। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফের প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করেন, একটি করে নেকি লেখেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪৪৬২)।
কালো পাথর স্পর্শের ফজিলত : পবিত্র কাবার আঙিনায় দুটো জিনিস রয়েছে, যা স্পর্শ করলে ঝরে যায় জীবনের পাপ। তার একটি হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর ও অন্যটি রুকনে ইয়ামানি। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করবে, এ দুটি তার সব গোনাহ ঝরিয়ে দেবে।’ (মুজামুল কাবির : ১৩৪৩৮)।
জমজম পানের ফজিলত : তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত নামাজান্তে মাতাফ থেকে বেরিয়ে পাশেই জমজম কূপ। সেখানে গিয়ে জমজমের পানি বিসমিল্লাহ বলে দাঁড়িয়ে পান করা হয়। জমজমের পানি সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে সেরা পানি হলো জমজমের পানি। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিকর খাদ্য এবং রোগমুক্তি।’ (তাবরানি : ৩৯১২)।
l মুহাম্মদ তোয়াহা হুসাইন