বিস্ফোরণ আতঙ্ক

সিদ্দিকবাজার এলাকায় একটি বহুতল ভবনে বিস্ফোরণ।
সিদ্দিকবাজার এলাকায় একটি বহুতল ভবনে বিস্ফোরণ।ছবি : সংগৃহীত

সায়েন্সল্যাব, সিদ্দিকবাজার, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণসহ সম্প্রতি একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এরই মধ্যে এসব বিস্ফোরণে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা না অন্তর্ঘাতমূলক কাজ তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। তবে এক সপ্তাহে দেশের প্রধান দুই নগরে তিনটি বড় বিস্ফোরণ যে নিরাপত্তাহীনতার উদ্ভব ঘটিয়েছে তা উদ্বেগজনক।

অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ঢাকা শহরে ভূগর্ভস্থ পয়ঃবর্জ্য লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাসের লাইন—কোনটা কোন দিক দিয়ে গেছে তা কি কারও জানা আছে? বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটার মূল কারণ ‘ম্যাপিং’ নেই। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বড় ভূমিকম্প হলে রাজধানীর অর্ধেক মানুষই পুড়ে মারা যাবে। তাহলে রাজধানী ঢাকা কি বিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে? ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে কখনো কখনো জমে থাকা গ্যাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এর প্রতিকার কীভাবে হবে। অনেকে এসব ঘটনার পেছনে নাশকতারও আশঙ্কা করছেন।

এমনিতেই রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি প্রবলভাবে রয়েছে। কোনো ধরনের ঝড়ঝঞ্ঝা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই যেখানে এভাবে ভবন ধসে পড়ে, সেখানে সাত বা আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে কী অবস্থা হবে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি বিষয়টি ভেবে দেখেছে? বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে ৩৫ শতাংশ এবং আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৪৩ শতাংশ বাড়িঘর ধসে পড়বে।

এ মৃত্যুপুরীকে জীবনের স্পন্দনে ভরিয়ে তোলার দায়িত্ব কার? যদি সেই দায়িত্ব কারও থেকেই থাকে, তারা কি তা পালন করছে? আমরা আশা করব, এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে। এগুলো আসলে দুর্যোগ, নাকি মনুষ্যসৃষ্ট—সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করে এসব ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করা দরকার। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় আগুনে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হওয়ার আগের রাতে গুলশানে এ আগুনের ঘটনা ঘটল। পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল ২০১০ সালের ৩ জুন। রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২৪ জন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি সেদিন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গড়ে ১৬ হাজার। ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএসএসএবি) এক তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর আগুনে মারা যায় ২৩৩ জন, আহত হয় প্রায় পাঁচ হাজার। এ ছাড়া প্রতিবছর গড়ে ৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত হচ্ছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, শুধু সচেতন হলেই অনেক অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব। ফায়ার সার্ভিসের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, সচেতনতার অভাব এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহার কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিলেও তা যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, বিড়ি-সিগারেট বা মশার কয়েলের আগুন সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করতে হবে। বিশেষ করে ঘনবসতি এলাকা, বস্তি, শিল্প-কলকারখানায় নিয়মিত মহড়া ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

আর কে চৌধুরী, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উপদেষ্টা ও সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com