অজয় দাশগুপ্ত
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দূরের দুরবিনে পজিটিভ বাংলাদেশ

দূরের দুরবিনে পজিটিভ বাংলাদেশ

আমাদের তারুণ্য ও যৌবনে আমরা কলকাতা বেড়াতে গিয়ে অবাক হতাম। সে শহরের বড় বড় দালানকোঠা ছিল বিস্ময়। সে দেশের বাজারে তখন উপচে পড়ত আঙুর, কলা, আপেল ও সবজি। আমাদের ছিল এর বিপরীত চিত্র। মনে পড়ে, কলকাতায় তখন আঙুরের কেজি ছিল ১০ টাকা। আর আমাদের দেশে ছিল ১০০ টাকা। সেই ১০০ টাকা জোগাড় করা ছিল স্বপ্নের মতো। শুধু কি তাই? আমাদের দেশের বাজারে তখন এসব ফলমূল ছিল সোনার হরিণের মতো। আর আজ? নিন্দুকের চোখ বন্ধ। কিন্তু আমরা দেখি বাংলাদেশেই বরং বাজারে ফলমূল উপচে পড়ছে। সবুজ সবজির সমারোহ ওপার বাংলার মানুষেরও চোখ ধাঁধিয়ে দেয় এখন। দাম, বাজার আর প্রতিযোগিতায় কোথাও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। কলকাতার তুলনায় অধিক সবুজ আর উন্নয়নে এগিয়ে আছি আমরা। এটাকে যারা মিথ্যা বা ভুল মনে করেন, তাদের চোখে হয় ঠুলি নয়তো তারা কানা।

উন্নয়ন আর সমৃদ্ধি যে কোনো দেশের মানুষের স্বপ্ন। আজকে সে স্বপ্ন আমাদের হাতের মুঠোয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ জয়রথে। নিন্দুক সমালোচকরা যে যাই বলুক, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তুলনামূলক আলোচনা করলেই আমরা পার্থক্য ধরতে পারব। অনেকে হয়তো জানেন পাকিস্তান এখন শেষ ধাপে ধুঁকছে। অর্থনীতির দৃষ্টিকোণে পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে আর বেশি সময় লাগবে না। সেখানকার মানুষরা একসময় বুক ফুলিয়ে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলত। এখন নাকি তারা বলে, পাকিস্তান সে জিন্দা ভাগো। বেঁচে পালাও পাকিস্তান থেকে। এই করুণ পরিস্থিতি পাকিদের প্রাপ্য। কারণ সে দেশের অর্থনীতি নিয়ম মানেনি।

আমাদেরও অনেক দুর্বলতা আছে। সেগুলো আমরা জানি। কিন্তু আমাদের এও জানা উচিত, বাংলাদেশ এখন পৃথিবীতে সাড়া জাগানো অর্থনৈতিক উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুতগতিতে অগ্রসরমান। ১৯৭২ সালের ৮০০ কোটি ডলারের ক্ষুদ্র জিডিপি এখন ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি বেশ বড় অর্থনীতি। ১৯৭০-৭১ অর্থবছরে সামষ্টিক আয়ে ছিল নেতিবাচক ১২ শতাংশ সংকোচন। আর করোনার ছোবলের আগ পর্যন্ত বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতকরা ৮ ভাগের ওপরে বিরাজমান ছিল। মাথাপিছু আয়ে ১৯৭২ সালে ৮৫ মার্কিন ডলার, এখন ২৫৫৪ মার্কিন ডলার। সামষ্টিক আয়ের অনুপাত হিসাবে বহির্বাণিজ্যে ১৯৭২ সালে শতকরা ২ ভাগের কম ছিল; এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৫ ভাগে। মোট সামষ্টিক আয়ে মাধ্যমিক খাতের অবদান ১৯৭২ সালে ছিল শতকরা ১৭ ভাগ, এর মধ্যে শিল্পোৎপাদনের ছিল শতকরা ৮ ভাগ। করোনা-পূর্ববর্তী বার্ষিক সামষ্টিক আয়ে মাধ্যমিক খাতের অবদান ছিল শতকরা ৩৩ ভাগ (শিল্পোৎপাদনে শতকরা ১৮ ভাগ)

উন্নয়নের সূচক এখন কথা বলছে। অনেকেই মনে করে এসব সূচক নাকি বানোয়াট । তারা ভোগবাদে বিশ্বাসী হওয়ার পরও এমন কথা বলে রাজনৈতিক কারণে। আসলে বাংলাদেশের চেহারায় যে পরিবর্তন, তা অস্বীকার করার সাধ্য কারও নেই। বিগত এক দশকে সামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়েছে। রাজনীতি, সম্প্রদায়গত বিভেদ, ধর্ম নিয়ে উসকানি–এসব বাদ দিলে দেশের মানুষের হাতে টাকা এসেছে। বিপুল না হলেও মধ্যবিত্ত হওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছে গেছে অনেক বড় এক জনগোষ্ঠী। কিন্তু লুটপাট, টাকা পাচার ও অনিয়মের কারণে আরও অনেক পথ যাওয়ার রাস্তাটা ক্রমেই সরু হয়ে উঠেছে বা উঠতে চাইছে।

করোনা মহামারি পুরো পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। এই কঠিন সময়েও বাংলাদেশ হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেনি। আমাদের সমাজে লেখাপড়ার অভাব, জ্ঞানের আকাল মারাত্মক। সহজ ছিল না মানুষকে টিকা দেওয়ানো। সহজ ছিল না ভ্যাকসিন দেওয়ানো। তারপরও সে কাজ সফলভাবে হয়েছে। নিন্দুকেরা যাই বলুক, বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু ও ঝুঁকি ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। যে পজিটিভ বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি তার অস্তিত্ব কিন্তু দৃশ্যমান উন্নয়নে বাঁধা নয়। এর বাইরে যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, তার কাছেই আছে মূল চাবিকাঠি। তারা মাঠে-ময়দানে, কলকারখানায় কাজ করে দেশকে সচল রাখে। বছরের পর বছর হরতাল, অবরোধ ও হাঙ্গামাবিহীন অর্থনীতি আমাদের কোথায় নিয়ে যেতে পারে–সেটা দেখার পরও কি আমরা বিশ্বাস করব না?

আমার ধারণা, নারীশক্তির জাগরণই দেশের মূল স্তম্ভ। বাংলাদেশের অর্জনের চালিকাশক্তি যেমন শেখ হাসিনা, তেমনি তার মতো এ দেশের নারীরাই আছেন অগ্রভাগে। নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়নভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও। ‘জাতীয় শিশু নীতি-২০১১’ প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুস্থ, এতিম, অসহায়, পথ-শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডে। পাকিস্তানের সঙ্গে এই তফাত আমাদের অনেক এগিয়ে রেখেছে, যা এখন সে দেশের বুদ্ধিজীবীরাও স্বীকার করেন। পাকিস্তানের কথা বারবার বলছি এই কারণে, এখনো দেশের জনগণের এক অংশ পাকি প্রেমে মশগুল। তাদের এই মানসিক অবস্থান আমাদের অর্থনীতিকে পিছিয়ে রাখছে। কারণ, এরা মন ও মগজে বাংলাদেশি হতে পারেনি এখনো। এই জাতীয় অভ্যন্তরীণ অবরোধ না থাকলে আমাদের অর্থনীতি আরও এগিয়ে থাকত।

বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ আর কাচের দেয়াল নয়। কেউ চাইলেই একে চুরমার করতে পারবে না। যতদিন কোনো অপশক্তি তা রুখে না দেয় ততদিন সচল থাকবে এই যাত্রা। একটা কথা বলতেই হবে, আমাদের দেশে অভাব আছে এখনো। বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের বাজার এখন অশান্ত। দাম বাড়ছে হু হু করে। সাধারণ মানুষের কষ্টও বাড়ছে। এমন কঠিন বাস্তবতায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত হলে দুঃখের সীমা থাকবে না। তাই রাজনীতিকের উচিত হবে কথা কমিয়ে, ব্যয় কমিয়ে দেশকে ঠিক পথে রাখা। বিরোধীদের দায়িত্ব বিরোধিতা যৌক্তিক করে তোলা। কারণ সবার আগে দেশ আর দেশের মানুষ।

আমি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে লিখতে পছন্দ করি কম। কারণ এগুলো ধার করতে হয়। আর এসব বোরিং বিষয়। কিন্তু পজিটিভ বাংলাদেশ যেখানে আমাদের সবার দেশ ও দেশের বাংলাদেশিদের কাম্য, সেখানে বারবার নেগেটিভিটি এসে আক্রমণ করে আমাদের। পথ লম্বা। পথ অসীম। আজ একদল কাল হয়তো আরেক দল। তার মানে এই না যে, এদের সবকিছু অস্বীকার করতে হবে। বলতে হবে সব শেষ সব শেষ। বরং যে যতটা দিচ্ছে তাকে কেন্দ্র করেই এগুবে দেশ ও সরকার। দেশ সরকার ও জনগণের সঙ্গে থাকবে–এটাই আমাদের চাওয়া। আজকের বিশ্ববাস্তবতায় নানা ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই সামনে যেতে হবে। কিন্তু সবার আগে পজিটিভ বাংলাদেশ। এই পজিটিভিটি যেন নষ্ট না হয়। তাহলেই আমাদের জয় অনিবার্য।

লেখক : কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক। সিডনি প্রবাসী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘রূপান্তর’ করে মামলা খেলেন জোভান-মাহি

নারী কাউন্সিলর চামেলীর নগ্ন ভিডিও ভাইরাল

এবার পাকিস্তানের ওপর চটেছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০ চুক্তি-সমঝোতা স্বাক্ষর 

আওয়ামী কর্মী লীগের ১০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক

রেকর্ড রানি টেইলর

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেপ্তার

তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাটি খুঁড়তেই মিলল রাইফেল, মাইন ও গ্রেনেড

মাঝ আকাশে দুই হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ, সব আরোহী নিহত

১০

তীব্র তাপপ্রবাহে কয়রায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ

১১

রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৩০

১২

তাপপ্রবাহে পুলিশের প্রতি ১১ নির্দেশনা

১৩

ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় ১৪ জনের যাবজ্জীবন 

১৪

পিরোজপুরে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা

১৫

লাগামহীন স্বর্ণের দাম, নাটের গুরু কে?

১৬

থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন পলক

১৭

আওয়ামী লীগের যৌথসভা আজ

১৮

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ / ৫০০ বছরের পুরোনো খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণ

১৯

তীব্র গরমে কী অবস্থা ঢাকার বাতাসে

২০
*/ ?>
X