এগিয়ে যেতে হবে তার প্রদর্শিত পথে

এগিয়ে যেতে হবে তার প্রদর্শিত পথে

আজ ১৭ মার্চ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৫৫ বছরের একটি জীবন। সেই জীবনের লক্ষ্যই ছিল মানুষের মুক্তি, মানুষের স্বাধীনতা। তাই জীবন কেটেছে রাজপথে। কিন্তু শোষকগোষ্ঠী সেই মুক্তির সংগ্রামকে মেনে নিতে পারেনি। বারবার তাকে ধরে নিয়ে গেছে কারাগারে। তাতে ৫৫ বছরের জীবনের প্রায় ১৩ বছরই কেটেছে কারাগারের প্রকোষ্ঠে। তাতে দমে যাননি। নিজের অবিচল লক্ষ্য থেকে পিছু হটেননি একচুল। আর তাই তো মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেল করে তুলেছিলেন যে জাতিকে, সেই জাতিকে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বাদ, মুক্তির স্বাদ। টুঙ্গিপাড়ার ছোট্ট খোকা থেকে তিনি হয়ে ওঠেন রাজনীতির মহানায়ক, হয়ে ওঠেন বাংলার আপামর জনসাধারণের মুজিব ভাই। সেই শেখ মুজিবের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী আজ।

বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন সত্তায় পরিণত হওয়া এ মহানায়কের জন্মদিন আমাদের জন্য এক নির্মল আনন্দের দিন। আজ বিনম্র শ্রদ্ধায় সঙ্গে আমরা তাকে স্মরণ করছি। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর যেখানেই বাঙালি আছে, সেখানেই নিখাদ ভালোবাসায় উদযাপিত হচ্ছে দিনটি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে একটি পতাকা দিয়েছেন, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দিয়েছেন এবং বিশ্বসভায় বাঙালি জাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তারই দেখানো পথ ধরে দেশ আজ এগিয়ে চলেছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার কাজে খুব বেশি সময় হাতে পাননি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মদদে কিছু বিশ্বাসঘাতক সেনাসদস্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করেছে। জাতির মুখে কালিমা লেপন করেছে। বিদেশে থাকায় এ হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছেন তার দুই কন্যা। আমাদের সৌভাগ্য, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা সেদিন নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বাধীনতার অর্জনগুলো রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। দেশকে আবার বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে এগিয়ে নিতে প্রাণপণ লড়াই করে চলেছেন। তার সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। নানা ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে।

বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তিনি জন্মদিন পালন করেছেন শিশুদের নিয়ে। তাই শিশু সংগঠনগুলোর দাবির মুখে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আজ একই সঙ্গে জাতীয় শিশু দিবসও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্য নেতাদের চেয়ে পৃথক এ জন্যই যে, তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন বাংলাদেশ নামক একটি জাতিরাষ্ট্র ও ভাষারাষ্ট্র। বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির শিকড় গভীরে প্রোথিত করেছেন তিনি। আমরা সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে কথা বলি, নিজের পরিচয় দিতে পারি। আমাদের আত্মপরিচয়সংকট থেকে রক্ষা করেছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি আমাদের অস্তিত্বের অংশ। অস্তিত্ববিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। সেইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে তার আদর্শ। বঙ্গবন্ধু সবসময় জাতীয় সক্ষমতা অর্জনে কথা বলতেন। বতর্মান বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে আবারও প্রমাণিত হয়েছে জাতীয় সক্ষমতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। তাই বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণে আমাদের হাঁটতে হবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে। তবেই চলমান সংকট মোকাবিলা সহজ হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com