মো. আতিকুর রহমান
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যানজট আর দুর্ঘটনা বন্ধে উদ্যোগ নিন

যানজট আর দুর্ঘটনা বন্ধে উদ্যোগ নিন

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এত আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন সত্ত্বেও শৃঙ্খলা ফেরেনি। নতুন আইন পাস হলেও তার বাস্তবায়ন নেই। তৈরি করা হয়নি এর বিধিমালা। এ ছাড়া অনেক জায়গায় ফুট ওভারব্রিজ বা ফুটপাত নেই। সাইন-সিম্বল নেই। থাকলেও তার তেমন ব্যবহার নেই। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া রাস্তার যেখানে সেখানে চলছে যাত্রী নামানো-ওঠানো। চালকদের মধ্যে চলছে ওভারটেকিংয়ের প্রতিযোগিতা। কমেনি লাইসেন্সবিহীন চালকদের দৌরাত্ম্য। ভাড়া আদায়ে অনিয়ম ও অভিযোগ।

এই দৃশ্য আর দেখতে হবে কতদিন। কিছু বাসে ই-টিকিট ব্যবস্থা থাকলেও মানা হচ্ছে না এই নিময়। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিআরটিএকে আরও তৎপর হতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে হতে হবে আরও দায়িত্বশীল। এ ছাড়া নিজ দায়িত্বের প্রতি আমাদের সবারই সজাগ হতে হবে সবার আগে। অন্যায়ের প্রতিবাদ শুরু করতে হবে নিজ উদ্যোগে।

পক্ষান্তরে দেশের আন্তঃজেলা মহাসড়কগুলোতে অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, যেখানে যানবাহন খুব দ্রুতবেগে চলাচল করে। এই সড়কগুলোতে মুখোমুখি যানবাহন চলাচল করলেও সড়কগুলো তেমন একটা চওড়া নয় এবং কোনো ডিভাইডার নেই। ফলে যানবাহনগুলো যখন পাশাপাশি চলে আসে, তখন তাদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব না থাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। ওভারটেকিংয়ের সময় এমন আশঙ্কা আরও বাড়ে। আর নিরাপদ দূরত্ব রাখতে হলে রাস্তা ছেড়ে যানবাহন নিচে নেমে আসে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। ঢাকার বাইরে অসংখ্য পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে, যেগুলো দুর্ঘটনা ঘটানোর অন্যতম কারণ। রাস্তাঘাটে যেসব অবৈধ চালক, ফিটনেসহীন গাড়ি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আটক করেন, তার অধিকাংশই অর্থের বিনিময়ে বৈধ হয়ে যায় বা মামলা কাগজ-কলমেই থাকে। এসব নিয়ম-কানুনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

যদিও কথাটি সত্য, আমাদের দেশের আয়তন কম, সেই তুলনায় জনসংখ্যা বেশি। এজন্য সবকিছুতে আমাদের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে সড়কে চলাচলে লেন মেনে চলতে হবে। বামে সাইকেল এবং মোটরসাইকেল চলবে। তারপর রিকশা, রিকশা ওভারটেক করতে পারবে না, একটার পেছনে একটা চলবে। তারপর চলবে বাস, কার এবং অ্যাম্বুলেন্স। এ ছাড়া জেব্রা ক্রসিং, ফুট ওভার অথবা আন্ডারপাস ছাড়া কেউ রাস্তা পার হতে পারবে না। ট্রাফিক পুলিশ সব জেব্রা ক্রসিংয়ে থাকবে। সারজেন্ট ফুটপাতে থাকবেন আর দূর থেকে মনিটরিং করবেন, অনিয়ম দেখলেই মামলা দিতে হবে। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কাগজ চেক করা যাবে না। গাড়ি লাল, হলুদ এবং সবুজ বাতি অনুযায়ী চলবে।

সম্প্রতি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ বাস্তবতা উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে, পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশালের সঙ্গে রাজধানীর সড়কপথে যাত্রীর সঙ্গে সঙ্গে বাসের সংখ্যাও বেড়েছে আগের তুলনায় কয়েকগুণ। অথচ তাল মিলিয়ে বাস টার্মিনালের উন্নয়ন হয়নি। টার্মিনালে জায়গা না পেয়ে মহাসড়কের ওপরই যত্রতত্র যাত্রী নামানো ও তোলার কাজ করছে বাসগুলো। এতে টার্মিনাল সংলগ্ন এক কিলোমিটার দীর্ঘ পথজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। আর নগরজুড়ে যানজট এখন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। সঙ্গে বাড়তি উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিনকার ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

দেশের নানা জায়গার মানুষকে বরিশালের ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। ফলে নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন সড়কের ওপর দিন দিন চাপ বাড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে ১১ কিলোমিটার মহাসড়ক অতিক্রম করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ওপর দিয়ে। এই সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন যেমন চলাচল করে, তেমনি জেলা শহরের অভ্যন্তরের ক্ষুদ্র পরিবহনগুলোও চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে গাড়ির চাপ বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ। অথচ সংকীর্ণ সড়কটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনো।

এদিকে বাস টার্মিনালে জায়গা না পাওয়ায় বাসগুলো রাখতে হচ্ছে এলোমেলোভাবে। কখনো টার্মিনাল সংলগ্ন রাস্তার পাশে আবার কখনো টার্মিনাল ছেড়ে অনেক দূরে মহাসড়কের পাশে। জায়গা না পেয়ে বাস রাখা হয় টার্মিনাল সংলগ্ন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সামনের সড়কেও। এতে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে মহাসড়ক। নগরজুড়ে যানজটের ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগ চেষ্টা করেও কোনো লাভ হবে না। এর জন্য বাস টার্মিনাল যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এই দুটি বাস টার্মিনালে বাসের বিশৃঙ্খলার কারণে পুরো নগরীতে যানজটের সৃষ্টি হয়। আমাদের দিক থেকে কঠোর পরিশ্রম করি নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদি যানজট না থাকে, পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের সময় কমে যাবে প্রায় ২ থেকে ৪ ঘণ্টা এবং ওই জেলাগুলোতে প্রসার ঘটবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের।

কৃষকরা পাবে পণ্যের ন্যায্য দাম। ফলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহও বৃদ্ধি পাবে। তা ছাড়া চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে ভারত, ভুটান এবং নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য আরও সহজ এবং দ্রুত হবে।

কিন্তু যানজটের কারণে এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে অতিরিক্ত সময় ও জ্বালানি দুটিই লাগছে। যানজটে সময় নষ্ট করে ও অধিক জ্বালানি পুড়িয়ে যাত্রী বা পণ্যবাহী যান চলাচল করলে পদ্মা সেতুর সুফল পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব হবে না। কাজেই আমরা প্রত্যাশা করি, পদ্মা সেতুর কারণে যেসব জেলায় কিংবা সড়কে-মহাসড়কে অতিরিক্ত যে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরসনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সড়কে নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে অবশ্যই পথচারীসহ চালকদের সচেতন হতে হবে। ফিটনেসহীন গাড়ির চলাচল বন্ধ করতে হবে। নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা করতে হবে। বাসগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা কমাতে হবে। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন তুলে দেওয়া দোষী চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে বলে আমি মনে করি। যদিও বাস্তবতা বিভিন্ন সময়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সিন্ডিকেট সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করেছে। ফলে সরকারের ও প্রশাসনের সব ইতিবাচক পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমরা সাধারণ জনগণ সড়কে ও গণপরিবহনে সব ধরনের অরাজকতার অবসান চাই।

লেখক : সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নওগাঁয় সিআইডি পরিচয়ে চাঁদাবাজি, অতঃপর...

ইন্দোনেশিয়ায় অগ্ন্যুৎপাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১১ হাজার মানুষকে

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স উন্নয়নের অন্যতম মূল চালিকা শক্তি : দীপু মনি

প্রচণ্ড তাপদাহে অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যা করবেন

মেঘনায় জাটকা ধরায় ২০ জেলে আটক

হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক / বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন

মদ বিক্রেতার হামলায় আহত হয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর

যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক রিমান্ডে 

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিবাসী পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার ২৪

সাভারে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩

১০

বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে : লিটন

১১

শিল্প এবং সংস্কৃতির উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে : তথ্যপ্রতিমন্ত্রী 

১২

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গলা কেটে হত্যা

১৩

বিরিশিরিতে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মোড়ানো সাদা মাটির পাহাড়

১৪

জামানত বৃদ্ধি উপজেলা নির্বাচনকে অর্থহীন করে তুলবে : গণতন্ত্র মঞ্চ

১৫

২৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের ওপর হামলা / ডিএমপির অনুসন্ধান কমিটি গঠন 

১৬

জবিতে রেজিস্ট্রার নিয়োগকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি 

১৭

অচিরেই সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজবে : সালাম

১৮

হঠাৎ সবুজ দুবাইয়ের আকাশ, বিরল দৃশ্য দেখল মরুশহর

১৯

ফের বাড়ল সোনার দাম, রেকর্ড ভাঙল অতীতের

২০
*/ ?>
X