নতুন শিক্ষাক্রম : সম্ভাবনা ও সামাজিক রূপান্তর

নতুন শিক্ষাক্রম : সম্ভাবনা ও সামাজিক রূপান্তর

কোনো জাতির উন্নতির প্রধান শর্ত হচ্ছে সুষ্ঠুনীতি, পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। রক্তঝরা দিনগুলোর সীমাহীন ত্যাগ ও কঠোর সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা অর্থবহ করতে হলে ইংরেজ প্রবর্তিত ও পাকিস্তান আমলে প্রচলিত শিক্ষা যুগের চাহিদা পূরণ করতে যে সক্ষম নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সর্বমহল থেকে শিক্ষা সংস্কারের দাবি উঠেছিল।

বাংলাদেশের জনগণকে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে সত্যিকারের জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্য সামনে রেখে ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির নানাবিধ অভাব ও ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ, শিক্ষার মাধ্যমে সুষ্ঠু জাতি গঠনের নির্দেশনা এবং দেশকে আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে পরিচালনা করার পথ নির্দেশনার উদ্দেশ্যেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদাকে কমিশনের প্রধান করে জাতীয় শিক্ষা কমিশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কমিশন শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধানকল্পে ১৯৭৪ সালের ৩০ মে কমিশনের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করে। কিন্তু ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

এরপর সামরিক সরকারের আমলে একাধিকবার শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীকালে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের সংবিধানে চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে এবং সংবিধানের ১৭-এর (খ) ধারার আলোকে একই ধারায় সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি হিসেবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন প্রজন্মকে দেশাত্মবোধে জাগ্রত করে গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১০ সালে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (বিশ্ব নাগরিকত্ব টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা) অর্জনের প্রচেষ্টা হিসেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনুসারে ২০২৩ থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন হবে। রূপকল্পের মূল লক্ষ্য হলো—মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক গড়ে তোলা।

এ শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের কিছু যোগ্যতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রূপরেখার যোগ্যতার সংজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতা অর্জন। যোগ্যতার ধারণায়নে মূল্যবোধের উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সংহতি, দেশপ্রেম, সম্প্রীতি, পরমতসহিষ্ণুতা, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা ও শুদ্ধাচার। এ ছাড়াও শিখনক্ষেত্রভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণীতে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ধারণায় বলা হয়েছে, নিজ নিজ ধর্মসহ সব ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান, শুদ্ধাচার, সাংস্কৃতিক নীতিবোধ, মানবিকতাবোধ, মানুষ-প্রকৃতি-পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি মূল্যবোধের গুরুত্ব জেনে তা চর্চার মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও অসাম্প্রদায়িক পৃথিবী সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করা।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। কী কী যোগ্যতা অর্জন করলে শিক্ষার্থীরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে, সেগুলো বিবেচনার কেন্দ্রে রেখে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সব শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা শিক্ষকদের রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর বিকাশ ও উৎকর্ষে সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের বাইরেও বহুমাত্রিক শিখনের সুযোগ সৃষ্টি ও স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি সংবেদনশীল, জবাবদিহিমূলক, একীভূত ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রম যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা, বিষয়বস্তুভিত্তিক নয়। এ নতুন শিক্ষাক্রমে দর্শন এবং ভাবনা অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা মতামতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ Thinking→ Acting→Experiencing→ Reflecting.

বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আন্তর্জাতিকমানের লেখাপড়ার সঙ্গে সমন্বয় রেখে শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিখবে তার ওপর এ শিক্ষাক্রমটি বিশেষভাবে আলোকপাত করে।

এ শিক্ষাক্রম দেশজ মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে ধারণ করে এবং গৎবাঁধা ভাবনা ও সংস্কারকে প্রশ্ন করতে শেখায়। সহজলভ্য শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত করে এবং স্বাধীনভাবে শিখতে সাহায্য করে। নতুন শিক্ষাক্রমে-পরীক্ষার চাপ নেই, রোল নম্বরের টেনশন নেই, ক্লাসের পড়া ক্লাসেই বুঝতে পারবে, প্রাইভেট ও কোচিংনির্ভরতা কমে আসবে। নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন শিক্ষার্থীকে আর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে না। জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে সে কতটা পারদর্শিতা অর্জন করেছে, তার ভিত্তিতেই তাকে মূল্যায়ন করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে শিক্ষার্থীকে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। বছরজুড়ে চলমান থাকবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর বছরে ছয় মাস অন্তর দুটি সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। পাঠ চলাকালে নির্ধারিত কাজ, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধানমূলক কাজ, মৌখিক উপস্থাপনা, রিপোর্ট তৈরি, মাঠ পরিদর্শন ইত্যাদি কাজে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ও কার্যক্রম দেখে পারদর্শিতার সূচকে (PI) শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা নিরূপণ করা হবে। এ ছাড়াও প্রত্যেক শিখন অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীর সার্বিক আচরণগত দিক মূল্যায়ন করার জন্য তাদের আচরণগত সূচক (BI)-এর মাত্রা নির্ধারণ করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে জুন মাসে সামষ্টিক মূল্যায়ন ১ এবং ডিসেম্বর মাসে সামষ্টিক মূল্যায়ন ২ অনুষ্ঠিত হবে। পূর্বঘোষিত এক সপ্তাহ ধরে এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত হবে। স্বাভাবিক ক্লাস রুটিন অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য অর্পিত কাজ সম্পন্ন করবে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও সফলতার জন্য সবার আগে শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। এই প্রথম শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সহায়ক গাইড (TG) এবং বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা সরবরাহ করেছে। যদি শিক্ষকরা প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত নির্দেশনা, শিক্ষক সহায়ক গাইড, মূল্যায়ন নির্দেশনা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলেন তাহলে নতুন শিক্ষাক্রম শতভাগ সফল হবে বলে আশা করা যায়। আগের শিক্ষাক্রম ছিল প্রতিযোগিতামূলক আর নতুন শিক্ষাক্রম হচ্ছে সহযোগিতামূলক, যেখানে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। যদিও অভিভাবকদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল যে, এ কারিকুলামে পরীক্ষা নেই কিন্তু বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সভার মাধ্যমে নতুন কারিকুলাম সম্পর্কে জানার পর তাদের মধ্যে এ ভ্রান্ত ধারণার অবসান হয়েছে এবং নতুন কারিকুলামকে খুব সহজভাবে নিয়েছে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য অভিভাবকদের এ কারিকুলামের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। বছরের শুরুতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে গেলে লক্ষ করা যায় প্রাণের স্পন্দন। নতুন কারিকুলামকে তারা খুব সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছে। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষকতা নিছক একটি পেশা নয়, এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। এ সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে এসডিজি-০৪-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আজকের শিক্ষার্থীকে ২০৪১ সালের উন্নত বিশ্বের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে সব আয়োজন সার্থক হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখানে সামষ্টিক মূল্যায়ন তথা প্রচলিত প্ৰথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক, বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গাঠনিক বা শিখনকালীন মূল্যায়ন। অর্থাৎ মূল্যায়ন হবে পাঠ চলাকালে অ্যাসাইনমেন্ট, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধানমূলক কাজ, মৌখিক উপস্থাপনা, রিপোর্ট তৈরি, মাঠ পরিদর্শন এসবের মাধ্যমে। এ শিখনকালীন মূল্যায়ন মূলত বছরব্যাপী চলতে থাকে যা যথার্থভাবে সম্পন্ন হলে অবশ্যই সর্বোত্তম মূল্যায়ন হবে এটি। যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়নে থাকবে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশের সুযোগ। অতএব এখানে শিক্ষকের দায়িত্বশীলতা, সততা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন শিক্ষার্থীকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে না। জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে সে কতটা পারদর্শিতা অর্জন করেছে তার ভিত্তিতেই তাকে মূল্যায়ন করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে শিক্ষার্থীকে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।

বছরজুড়ে চলমান থাকবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর বছরে ছয় মাস অন্তর দুটি সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। পাঠ চলাকালে নির্ধারিত কাজ, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধানমূলক কাজ, মৌখিক উপস্থাপনা, রিপোর্ট তৈরি, মাঠ পরিদর্শন ইত্যাদি কাজে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ও কার্যক্রম দেখে পারদর্শিতার সূচকে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা নিরূপণ করা হবে। এ ছাড়াও প্রত্যেক শিখন অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীর সার্বিক আচরণগত দিক মূল্যায়ন করার জন্য তাদের আচরণগত সূচক-এর মাত্রা নির্ধারণ করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে জুন মাসে সামষ্টিক মূল্যায়ন ১ এবং ডিসেম্বর মাসে সামষ্টিক মূল্যায়ন ২ অনুষ্ঠিত হবে। পূর্বঘোষিত এক সপ্তাহ ধরে এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত হবে। স্বাভাবিক ক্লাস রুটিন অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য অর্পিত কাজ সম্পন্ন করবে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও সফলতার জন্য সবার আগে শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সঙ্গে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। এই প্রথম শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সহায়ক গাইড এবং বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা সরবরাহ করেছে। যদি শিক্ষকরা প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত নির্দেশনা, শিক্ষক সহায়ক গাইড, মূল্যায়ন নির্দেশনা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলেন তাহলে নতুন শিক্ষাক্রম শতভাগ সফল হবে বলে আশা করা যায়।

লেখক : প্রধান শিক্ষক, মডেল একাডেমি, মিরপুর-১, ঢাকা

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com