
গতকাল ছিল বিশ্ব কিডনি দিবস। দিনটি সারা বিশ্বে এ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি ও এ রোগ থেকে বাঁচতে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে।
দেশে কিডনি রোগীসহ ভয়াবহভাবে বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীর সংখ্যাও। সেইসঙ্গে বেড়েছে এ রোগের চিকিৎসাব্যয়। একদিকে অধিকাংশ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয় বহনে অক্ষম; অন্যদিকে রয়েছে এ দুই ধরনের চিকিৎসায় হাসপাতাল, চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ঘাটতি।
বৃহস্পতিবার কালবেলায় প্রকাশিত এ বিষয়ক একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় দুই কোটির অধিক মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘমেয়াদি এসব কিডনি রোগীর শেষ চিকিৎসা নিয়মিত ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। সেইসঙ্গে রয়েছে কিডনি দাতা ও সামাজিক সচেতনতার অভাব। পাশাপাশি দক্ষ জনবলের ঘাটতিতে কিডনি প্রতিস্থাপনও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ কিডনি রোগীকে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে দেশে ১০ হাজার ৮৪১ জন মানুষ কিডনি রোগে মারা গেছে। দেশের দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীর মাত্র ২৫ ভাগ রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা প্রতিস্থাপন এবং ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণ করতে পারে। এ চিকিৎসায় উচ্চ ব্যয়ভার, অপ্রতুল চিকিৎসা সুবিধা এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টের অভাবই এ জন্য দায়ী।
আমরা জানি সারা দেশে মাত্র ১৪টি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ২৬৩টি ডায়ালাইসিস শয্যা রয়েছে; যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। জানা যায়, দেশের প্রতি ১৫ লাখ মানুষের জন্য রয়েছেন মাত্র একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আর কিডনি প্রতিস্থাপনের সক্ষমতা রয়েছে মাত্র ২৫ জন চিকিৎসকের! সুতরাং দেশে রোগীর সংখ্যা এবং তাদের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা অনিশ্চিত—তা এ পরিসংখ্যান থেকেই বোধগম্য। ক্ষীণ হলেও, এ বিষয়ে অবশ্য একটি আশার কথা বিশেষজ্ঞরা বলছেন। তা হলো—চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্বাধুনিক আবিষ্কার স্টেম সেলভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে নিয়মিত ডায়ালাইসিসের তুলনায় ব্যয়ও কমবে আবার সবার জন্য চিকিৎসাও মিলবে। দেশের একদল চিকিৎসক দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের চিকিৎসায় স্টেম সেল প্রয়োগে পরীক্ষা চালাচ্ছেন। তাদের দাবি, এ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। তারা ৭৭ জন দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীর ওপর এ গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে এরই মধ্যে সফলতাও পেয়েছেন। আমরা চাই সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টির ইতিবাচক ফল যাতে আসে সেদিকে গুরুত্ব দেবেন।
আমরা জানি বর্তমানে কিডনি রোগের চিকিৎসায় দেশের অক্ষমতা কতটা প্রকট। সুতরাং এ রোগের ঝুঁকি কমাতে আমাদেরও সচেতন হওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে, দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আনতে হবে পরিবর্তন। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। পরিমিত পানি পান, ধূমপান পরিহার, ওজন নিয়ন্ত্রণসহ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন পরিহার করতে হবে।
আমরা মনে করি, সর্বাগ্রে কিডনি রোগীর চিকিৎসাব্যয়, বিশেষ করে ডায়ালাইসিস খরচ কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। যে কোনো উপায়ে এটি করতেই হবে। কেননা দীর্ঘদিন ধরে বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসাসেবা একটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যা অত্যন্ত হতাশাজনক। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত চিকিৎসাসেবার সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা দ্রুত তৎপর হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।