বঙ্গবন্ধু আন্দোলন পরিচালনার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি ৩৫টি নতুন নির্দেশ জারি করেন। নিজ বাসভবনে ন্যাপ নেতা আবদুল ওয়ালী খানের সঙ্গে বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যতদিন অধিকার আদায় হবে না, ততদিন বাঙালির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। জাতীয় লীগ নেতা আতাউর রহমান খান আবারও বঙ্গবন্ধুর প্রতি অস্থায়ী সরকার গঠনের আহ্বান জানান। এদিন দেশের প্রয়োজনে অস্ত্রধারণ করার ঘোষণা দেন ঝিনাইদহের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। একাত্তরের এদিন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কার্যক্রম আরও জোরদার হয়।
জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর চার দফা পূর্বশর্ত মেনে নেওয়ার দাবিতে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী সংগঠন এবং যুব মহিলা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সভা-সমাবেশ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে ন্যাপ নেতা খান আবদুল ওয়ালী খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে রুদ্ধদ্বার কক্ষে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়। জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের উপনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জীবনযাপনের জন্যই আমাদের সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু রাতে এক বিবৃতিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে নতুন নির্দেশ ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নির্মূল করা যাবে না। আমরা অজেয়, কারণ আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে সংবাদপত্র প্রেস কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে সকালে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সমাবেশ শেষে মিছিলসহ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তার হাতে একটি আবেদনপত্র দেওয়া হয়। তাতে নেতারা যে কোনো নির্দেশ পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে অবিলম্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুরোধ জানান। ১১৫ নম্বর সামরিক নির্দেশের প্রতিবাদে দেশরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীরা নগরীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তারা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে বর্তমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্যবাহী ‘মন্টেসেলো ভিক্টরি’ নামের আরেকটি জাহাজের গতিপথ পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। ‘ওসান এন্ডুরাস’ নামের সমরাস্ত্রবাহী আরেকটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের ১০ নম্বর জেটিতে নোঙর করে বন্দর শ্রমিকদের অসহযোগিতার কারণে ৯ মার্চ ১৬ নম্বর জেটিতে সমরাস্ত্রবাহী অন্য জাহাজ ‘সোয়াত’-এর সমরাস্ত্র খালাসের চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়। প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে ১১ মার্চ খাদ্যবাহী জাহাজ ‘ভিটেজ হরাইজন’-এর গতিপথ চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবর্তে করাচি বন্দরে পরিবর্তনের ঘটনা সম্পর্কে অবিলম্বে তদন্ত অনুষ্ঠানের দাবি জানান।
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ দেশ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করে।
