রাজা রামমোহন রায়ের জন্মদিন

রাজা রামমোহন রায়ের জন্মদিন

অবিভক্ত বাংলার নবজাগরণের অগ্রদূত, একাধারে সমাজ, শিক্ষা ও ধর্মীয় সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়। তার বাবা ছিলেন রামাকান্ত রায় এবং মা তারিণী দেবী। ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ও বাঙালি দার্শনিক রামমোহন রায় তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্ম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। তার সবচেয়ে বড় কাজ ছিল সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তিতে অবিস্মরণীয় ভূমিকা।

তিনি ১৭৭২ সালের ২২ মে হুগলি জেলায় রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রামমোহন রায় বারানসি থেকে প্রথাগত সংস্কৃত শিক্ষার পর পাটনা থেকে আরবি ও ফারসি ভাষা শেখেন। পরে তিনি ইংরেজি, গ্রিক ও হিব্রু ভাষাও শেখেন। তরুণ বয়সে কলকাতায় মহাজনের কাজ করতেন। ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। কলকাতায় কোম্পানির নবাগত অসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে কাজের সুবাদে ভালো ইংরেজি শেখেন। ১৮১৫ সাল থেকে কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হন। এখান থেকেই প্রকাশ্যে তার সংস্কার-প্রচেষ্টা শুরু। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ফারসি ভাষায় লেখা (ভূমিকা অংশ আরবিতে) তুহফাতুল মুহাহহিদিন। বইটিতে একেশ্বরবাদের সমর্থন আছে। একেশ্বরবাদ (বা ব্রাহ্মবাদ) প্রতিষ্ঠার জন্য বেদান্ত-সূত্র ও তার সমর্থক উপনিষদগুলো বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করেন। পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয় বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ। বেদান্তগ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখান আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে ব্রাহ্মসমাজ নাম ও রূপ দেন। রামমোহন ১৮২৮ সালের ২০ আগস্ট ইংল্যান্ড যাত্রার আগে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে এ ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে বাংলার পুনর্জাগরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ভারতের প্রথম সংবাদপত্রের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ ছিল রাজা রামমোহন রায়ের। সাহেবদের বাংলা শেখানোর জন্য বাংলা ও ইংরেজিতে ব্যাকরণ রচনা করেন। বেদান্ত উপনিষদগুলো বের করার সময়ই সতীদাহ অশাস্ত্রীয় এবং নীতিবিগর্হিত প্রমাণ করেন। পুস্তিকা লেখেন ‘প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ নামে। এ সময়েই আইন করে সহমরণ-রীতি নিষিদ্ধ করা হয়। মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে বিলেত পাঠানোর সময় রাজা উপাধি দেন। ১৮৩১ সালে মোগল সাম্রাজ্যের দূত হিসেবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভ্রমণ করেন। তিনি সারা জীবন ধর্মীয়, সামাজিক কুসংস্কারসহ সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন। বিশেষ করে ধর্মের কুসংস্কারের বিষয়ে তার অবস্থান প্রমাণ করতে বেদের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছেন। রাজা রামমোহন রায়ের প্রাসঙ্গিকতা আজও এতটুকু কমেনি। সমাজে আজও রয়েছে ধর্মকে ব্যবহার করে হিংসা, হানাহানি। রয়েছে নানা ধর্মীয় কুসংস্কার। নারীসুরক্ষার অগ্রগতি হলেও আজও তা সম্পন্ন হয়নি। নৈতিকতার ও মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজকে এক অদ্ভুত সংকটের সামনে দাঁড় করিয়েছে। সুতরাং সমাজের সার্বিক ইতিবাচক পরিবর্তনে তার আজও এক অনুপ্রেরণার নাম। ১৮৩৩ সালে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলের স্টেপলটনে তিনি মারা যান। ব্রিস্টলে আর্নভ্যাল সমাধিস্থলে তাকে কবর দেওয়া হয়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com