মহাকালের জনসভায় জননেত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরোনো ছবি

আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা। এ সময় আমাদের স্কুলমাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। তখন তিনি সরকারে নেই, সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। সারের দাবিতে আন্দোলনকালে কৃষক নিহত হওয়ার ঘটনায় পরের বছরই তিনি আমাদের স্কুল মাঠে আবার জনসভা করেছিলেন এবং ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয়েই আমাদের ক্লাসরুম ভবনটির পাকা দালান নির্মাণ করেছিলেন।

তারপর ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাস। আবার দেখা করার সৌভাগ্য হলো শেখ হাসিনার সঙ্গে। এবার একেবারে সামনাসামনি দেখা। বুকটা গর্বে ভরে উঠছে। সুধা সদন থেকে বের হওয়ার পর আমার মনে বিরাট আনন্দ। কী করব; হেঁটে বাসায় যাব, না রিকশায় বাসায় যাব, দিশা পাচ্ছিলাম না। অনেকক্ষণ রাস্তায় হাঁটলাম। আবার পরক্ষণেই মনটা খারাপ হলো এই ভেবে যে, এত বড় একজন মানুষের সঙ্গে সামনাসামনি সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েও কিছুই বলতে পারলাম না। অন্য কিছু নয়, আমি যে তার জনসভায় গাছে উঠে তাকে দেখেছি এটা অন্তত বলতে পারতাম। নিজের ওপর নিজেরই রাগ বাড়তে লাগল। ২০০৩ সালে আমাদের সংগঠনের স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দেখা হলেও বাক্যবিনিময়ের অবকাশ ছিল না।

পরের ঘটনা ২০০৪ সালের। ২১ আগস্টে শেখ হাসিনার জনসভায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হলো। অনেকেই হতাহত হলো। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলেন মুক্তিকামী জনতার ভালোবাসার নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

২৩ আগস্ট দুপুরে জানতে পারলাম, রাতে আমাদের সংগঠনের শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। প্রতিনিধিদলে আমিও আছি। মনের মধ্যে আবারও এক অজানা শিহরণ। এত বড় হামলার পরও মাননীয় নেত্রীকে আল্লাহ প্রাণে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাকে আবার সামনাসামনি দেখতে পাব বা সমবেদনা জানাতে পারব, এটা আমার কাছে বিরাট পাওয়া মনে হলো। ভাবতে লাগলাম এবার কী বলা যায়। ভাষা গাঁথুনির চেষ্টা করছি। অনেক কথা গুছিয়ে নিলাম। কাঙ্ক্ষিত সময়ে বলতে পারলে চলে।

সুধা সদনে বসে আছি। সাড়ে ৯টার দিকে ডাক পড়ল। সবাই একে একে সাক্ষাৎ কক্ষে ঢুকলাম। সর্বকনিষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে সবার পরে ঢুকতে হলো। এরই মধ্যে বড়রা আসন নিয়েছেন। আমাকে বসতে হলো পরম শ্রদ্ধেয় নেত্রীর ঠিক মুখোমুখি একটি আসনে। কী একটা অবস্থা। আবার ভালোও লাগছে। কারণ এবার প্রস্তুতি ভালো। শেখ হাসিনা রুমে ঢুকেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন আছো? বিশাল প্রস্তুতি সত্ত্বেও এ পর্যায়ে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। সাত-পাঁচ না ভেবেই এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললাম, ‘আমরা ভালো আছি। আপনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আমরা খুব দুঃখ পেয়েছি। আমরা এর বিচার চাই।’ আরও এলোমেলো অনেক কথা। কিছু সাবলীলভাবে বলতে পারছিলাম, কিছু কথায় বারবার আটকে যাচ্ছিলাম। তিনি সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। আর আটকে যাওয়া বাক্যগুলোতে তিনি শব্দ যোগ করে দিয়েছিলেন বলেই বাক্য পূর্ণ করা সম্ভব হয়েছিল।

প্রথম দিন জনসভায় তাকে দেখার পর এবং যেদিন তিনি আমার কুশল জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারপর মনের মধ্যে যে আদর্শিক শ্রদ্ধাবোধের জন্ম হয়েছিল, আজও তা জাগ্রত। আমার অনুভূতিতে এটাই সদা বিরাজমান যে, বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি, কিন্তু আমি একজন শেখ হাসিনাকে দেখছি।

মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com