রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই

চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই

নির্বাচনকালীন সরকারসহ দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ। তার আশঙ্কা নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বড় দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে সমঝোতা বা সংলাপ না হলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে। দেশে এখন ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলেও দাবি করেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিভক্ত গণফোরামকে ঐক্যবদ্ধ করার উপায়সহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কালবেলা প্রতিবেদক রাজ কুমার নন্দী ।

কালবেলা : নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত। আওয়ামী লীগ বলছে সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে সংকট উত্তরণের উপায় কী?

আবু সাইয়িদ : প্রত্যেক জাতিরই একটা ক্রান্তিকাল থাকে। ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ডায়ালগ (সংলাপ) করা। কিন্তু আমাদের দেশে বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ডায়ালগ হবে কিনা, সেটা জানি না। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে উনি ডায়ালগ করবেন না। ডায়ালগ যদি না হয়, তাহলে দার্শনিকরা বলে থাকেন, সেখানে সংঘাত হয়। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে যদি সমঝোতা বা সংলাপ না হয়, তাহলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণে একটা পর্যায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘাত হবে। সেই সংঘাত দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তারপরও অনেক সময় দেখা যায়, ধ্বংসের ভেতর থেকে সৃষ্টি হয় এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে পরিশীলিত একটা জীবন ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা এগুলো হয়—ইতিহাস তাই বলে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সংঘাতের মধ্য দিয়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হবে। যেটা দেশের জন্য একটা কঠিন অবস্থার সৃষ্টি করবে।

কালবেলা : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকার এই আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে। এমন প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের সফলতা নিয়ে আপনারা কতটুকু আশাবাদী?

আবু সাইয়িদ : মানুষের জন্য আন্দোলন করলে কখনো বৃথা যায় না। আজ হোক, কাল হোক সফল হবেই। চলমান যুগপৎ আন্দোলন হচ্ছে আন্দোলনের দ্বিতীয় স্তর। তারপর তৃতীয় স্তরে গিয়ে সবাই একটা প্ল্যাটফর্মে চলে আসবে। তখন আন্দোলনের গতিবেগ বাড়বে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানুষ আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হবে। ফলে আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে এবং ক্রমেই সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে।

কালবেলা : বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলন যদি সফল না হয়, তাহলে আগামীতে কি ২০১৪-এর মতো আরও একটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে?

আবু সাইয়িদ : দেশে এখন সেই (একতরফা নির্বাচন) পরিবেশ নেই। সেই ধরনের নির্বাচন করার মতো সরকারের অবস্থাও নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো দলেরই একক এবং সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করার সক্ষমতা নেই। আরেকটি বিষয়, বড় দলগুলোর সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়। এই ক্ষমতায় যাওয়ার প্রেক্ষাপট সামনে রেখে যে ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে, কথাবার্তার তর্ক চলছে–সেটাতে কোনো লজিক খুঁজে পাই না। অতীতে এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথসহ আরও অনেক সংস্থা থেকে দূত এসে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট উত্তরণে তারা এবার মধ্যস্থতা করবেন কিনা–সেটা জানি না। তবে ক্ষমতাসীনরা যদি আবারও ২০১৪ সালের মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন করেও, সে নির্বাচন টিকবে না, দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচন কমিশন নিজেই বলেছে, বিরাজমান অবস্থার মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

কালবেলা : গণফোরাম এখন দুই ভাগে বিভক্ত। ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কিনা?

আবু সাইয়িদ : রাষ্ট্রের চার মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য গণফোরাম গঠন করা হয়েছিল। আমি গণফোরামে গিয়ে দেখলাম—গণফোরামে মাঠের পলিটিক্স নেই, চেম্বার পলিটিক্স। পলিটিক্সটা চেম্বারের ভেতরে যাওয়ার ফলে গণফোরাম জনমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন একটা দলে পরিণত হয়। সেই দলটাকে মানুষের সামনে আনার জন্য, মানুষের কথা বলার জন্য, মানুষের দুঃখ-কষ্টকে ধারণ করে তার প্রতিকার বিধানের জন্য যদি রাজনীতি করতে

হয়–তাহলে গণফোরামকে মাঠের গণফোরাম, জনগণের গণফোরাম করতে হবে অর্থাৎ ফোরামটা করতে হবে জনগণের জন্য, চেম্বার ফোরাম করে কোনো লাভ নেই। সে কারণে গণফোরাম বিভক্ত হয়েছে। ড. কামাল হোসেন কথাবার্তা ভালো বলেন। সব সময় গণতন্ত্রের কথা বলেন, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির কথা বলেন, কার্যকর গণতন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু উনি যে করবেন সেই শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক সক্ষমতায় যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে উনার পক্ষে কোনো দলের নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। গণফোরাম দুই ভাগ হলেও আমরা তাকে বাদ দিইনি। তাকে পৃষ্ঠপোষক, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে সম্মানজনক অবস্থানে রেখেছি। কিছু দুষ্টু লোক সেখানে গিয়ে যদি উনাকে নিয়ে গণফোরাম আলাদা করতে চান, এটা করতে পারেন না। এমনও হতে পারে–একটা সময় হয়তো ড. কামাল হোসেন আত্মোপলব্ধি থেকে বুঝতে পারবেন, গণফোরাম নতুনদের হাতে ছেড়ে দেওয়া ভালো।

কালবেলা : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আবু সাইয়িদ : যারা রাজনীতি করেন তাদের কয়েকটা গুণ থাকতে হয়। প্রথম গুণ হলো, দেশপ্রেম। দ্বিতীয় গুণ হলো, মানুষের অভাব-অনটন যেগুলো আছে সেগুলো দূর করার জন্য তাদের সঙ্গে থাকা। আরেকটা হলো, মেধার চর্চা করা। যদি সৃষ্টিশীল রাজনীতিবিদ হতে না পারেন, তিনি পুরোপুরি রাজনীতিবিদ হন না। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিটে, মুক্তিযুদ্ধের ধারায় একটা সুখী-সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে আমরা কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিশা-ডিপজলকে মালা পরিয়ে বরণ করলেন নিপুন

তীব্র গরমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নির্দেশনা

সিরিয়ায় ফের শক্তি দেখাল আইএস, ২৮ সেনা নিহত

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত এলো

আদালতে ছিলেন ট্রাম্প, বাইরে নিজ শরীরে আগুন দিলেন যুবক

দীর্ঘকাল পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দৌড়ালেন ক্রিকেটাররা

কুকুরের কামড়ে একই এলাকার শিশুসহ আহত ৪

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল আরেক দেশ

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

১০

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ২৭ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

১১

ছাতকে ১৪৪ ধারা জারি

১২

দাবদাহে নষ্ট হচ্ছে আমের গুটি, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

১৩

শনিবার দিনটি কেমন যাবে আপনার?

১৪

মোস্তাফিজে মজেছেন পাথিরানা

১৫

ভারতে প্রথম দফায় রেকর্ড ভোটগ্রহণ

১৬

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ

১৭

আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

১৯

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

২০
*/ ?>
X