চলন্ত গাড়িতে সিটবেল্ট না পরায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে জরিমানা করা হয়েছে। গাড়িতে থাকা অবস্থায় সিটবেল্ট খুলে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য একটি ভিডিও করছিলেন সুনাক। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হয়েছে, সুনাক এ ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং তিনি জরিমানার টাকা পরিশোধ করবেন। সুনাক দ্বিতীয়বারের মতো এ ধরনের জরিমানার নোটিশ পেলেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ২০০৮ সালে তার মেয়ের আবদার রক্ষা করতে একটি হোটেলে খেতে গিয়েছিলেন মেয়েকে নিয়ে। হোটেলে খাবার সময় মেয়ের হাত লেগে একটি গ্লাস পড়ে ভেঙে যায়। টনি ব্লেয়ার গ্লাসের দাম পরিশোধ করেন এবং মেয়েকে বলেন যেন হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। মেয়ে তাই করেছিল।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এ রাজার ভাগনি একটি টেন্ডার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এরই জের হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে সে দেশে সুপ্রিম কোর্ট তলব করেন এবং তিনি আদালতে হাজির হয়ে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য হন আর এ রাজা মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। আরেক ঘটনায় মার্কিন বিচার বিভাগের তদন্তকারীরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাড়ি থেকে ছয়টি গোপন নথি পেয়েছিল। প্রেসিডেন্টের ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের বাড়িতে ১৩ ঘণ্টা অনুসন্ধান চালিয়ে এই নথিগুলো পাওয়া যায়। এর আগে উইলমিংটনের বাড়ি থেকে আরও কিছু নথি জব্দ করা হয়েছিল। সেগুলো বাইডেন সিনেটর থাকাকালে এবং বারাক ওবামার সরকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়কার নথি। আইনজীবী বব বাওয়ের বলেন, ‘হাতে লেখা ব্যক্তিগত নোট’ এবং ‘আশপাশের আরও কিছু সামগ্রী’ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাইডেন এবং তার স্ত্রী সে সময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। শনিবার এক বিবৃতিতে মি. বাওয়ের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রেকর্ড এবং সম্ভাব্য গোপন জিনিসপত্র অনুসন্ধানের জন্য তার পুরো বাড়িতে তল্লাশি চালাতে বিচার বিভাগ বা ডিওজেকে অনুমোদন দিয়েছেন।’
আমি বলতে চাচ্ছি আইনের শাসনের কথা। স্বাধীনতা ও সাম্য ভূমিকা বিশ্বের সবকিছু আইন বা নিয়মের অধীন। সবকিছুই নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এগুলো প্রাকৃতিক আইন। কিন্তু পৌরনীতিতে আইন বলতে শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মকে বোঝায়। এগুলো মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এ আইনগুলো রাষ্ট্র ও সমাজ তৈরি করে। তবুও প্রথা, ধর্ম, বিচারকের রায়, ন্যায়বোধ প্রভৃতি উৎস হতেও আইন জন্মলাভ করে। আইনের সব থেকে শক্তিশালী উৎস হলো আইন পরিষদ ও জনমত। আইনের শাস্তিমূলক ক্ষমতার কারণে জনগণ আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদান করে। কিন্তু শুধু ভয়ের কারণে জনগণ আইন মান্য করে না। সমাজের নৈতিকতার ওপর আইন প্রতিষ্ঠিত এবং নিরপেক্ষ বলেই আইন স্বতঃস্ফূর্ত আনুগত্য লাভ করে। অর্থাৎ আইন ও নৈতিকতা পরস্পর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রের ক্ষমতাও আইনের ওপর নির্ভরশীল যদিও রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে। আইনের দ্বারাই রাষ্ট্র সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলে। জনগণের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য রাষ্ট্রকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হয়। আইন ছাড়া স্বাধীনতা উপভোগ করা সম্ভব নয়। আইন আছে বলেই স্বাধীনতা আছে। আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর নির্ভরশীল। স্বাধীনতা আবার সাম্যের ওপর নির্ভরশীল। লাস্কির মতে, রাষ্ট্র যত বেশি সমতা বিধান করবে, স্বাধীনতার উপভোগ তত বেশি নিশ্চিত হবে। সুতরাং স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, এ নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি দেশই আইন দ্বারা শাসিত এবং আইন সবার জন্য সমান। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’। কাজেই আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই।
লেখক : সাংবাদিক