দুর্ঘটনায় পথচারীর মৃত্যু বাড়ছে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাওয়া যেন এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্রতিবছরই সড়ক দুর্ঘটনার এই হার ক্রমে বেড়েই চলছে। সম্প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা দেশের কিছু মূলধারার প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়া পর্যালোচনা শেষে যে জরিপ উপস্থাপন করেছে, তা সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত। সংস্থাটির জরিপে সব চাইতে দুঃখজনকভাবে যে চিত্রটি ফুটে উঠেছে সেটি হলো, সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারীর মৃত্যু।

সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশের সড়কগুলোতে দুর্ঘটনায় কীভাবে মানুষ নির্বিচারে নিহত হচ্ছে। আর এই নিহত হওয়া মানুষের মধ্যে সিংহভাগই কর্মজীবী। অর্থাৎ একজন মানুষ কর্মের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে অথচ তাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে। শুধু তাই নয়—একজন সুস্থ মানুষ শুধু অসচেতনার জন্য কিংবা যানবাহন চালকের বেপরোয়া গতির কারণে প্রাণ হারাচ্ছে, যা কারোরই কাম্য হতে পারে না। আর একটি পরিবারের একজন কর্মক্ষম মানুষ যখন ওই পরিবার থেকে চিরতরে চলে যায় তখন পরিবারটিতে যে কী ধরনের দুর্দশা নেমে আসে, তা ভুক্তভোগী পরিবার ছাড়া আর কেউই উপলব্ধি করতে পারে না।

বর্তমানে নির্বিচারে সড়কে প্রাণ ঝরে পড়া এখন আমাদের জাতীয় জীবনে এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ রূপে দেখা দিয়েছে। সরকারের নানা ধরনের পদক্ষেপ সত্ত্বেও লাগাম টানা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনার। পুরোনো আইন বদলে ফেলে নতুন আইন করা হয়েছে। মহাসড়কে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে গাড়ির গতিসীমা। সড়ক মহাসড়কের পাশে নানা ধরনের সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড-বিলবোর্ডসহ সব রকম প্রচেষ্টাই যেন ব্যর্থ হচ্ছে। এক ধরনের অতি মুনাফালোভী মালিক-শ্রমিকের অসহযোগিতা ও কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই কী সড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন করা যাচ্ছে না? নাকি যাত্রী বা পথচারীদের অসর্তকতা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এ ব্যাপারে সরকারি সজাগ দৃষ্টি একান্তভাবে কাম্য। এ ছাড়া হয়তো গাড়ির দ্রুতগতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালক—এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এই পর্যবেক্ষণে সব চাইতে উদ্বেগের যে ব্যাপারটি উঠে এসেছে সেটি হলো, পথচারী নিহতের ঘটনা। যারা একেবারেই পথে চলতে চলতে কিংবা রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। কেউ কেউ হয়েছে আজীবনের জন্য পঙ্গু। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬২৭ পথচারী নিহত হয়েছে। রাস্তায় হাঁটার সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং রাস্তা পারাপারের সময় ঘটেছে ৫১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে এবং ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে পথচারীর অসতর্কতার কারণে।

স্কুলে যাওয়া-আসার পথে, বাড়ির কাছে খেলাধুলা ও রাস্তা পারাপারের সময় তারা যানবাহনের চাপা অথবা ধাক্কায় নিহত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ যাই হোক না কেন, এর পুরো দায় কেবল যানবাহন চালকের ওপর সবসময় বর্তায়, তা কিন্ত নয়। অনেক সময় পথচারীর অসতর্কতাও কিছু দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তবে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, সড়কের সাইন-মার্কিং-জেব্রাক্রসিং চালক এবং পথচারীর না জানা ও না মানার প্রবণতা, যথাস্থানে সঠিকভাবে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ না করা এবং ব্যবহার উপযোগী না থাকা, রাস্তায় হাঁটা ও পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেডফোনে গান শোনা, চ্যাটিং করা এবং সড়ক ঘেঁষে বসতবাড়ি নির্মাণ ও সড়কের ওপরে হাট-বাজার গড়ে উঠা ইত্যাদি কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। সাধারণ কিছু নিয়মনীতি মেনে চললে ও পথচারীরা আরও একটু সচেতন হলে নিহতের এ ঘটনা অনেকাংশেই কমে আসতে পারে। সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে পথচারীদের সতর্কতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও নজরদারি আজ সময়ের দাবি। একই সঙ্গে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশার প্রাপ্তি যেন ঘটে।

নুরুন্নবী খোকন, মেহেরপুর

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com