
চলতি সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র মাস রমজান। মাসব্যাপী ধর্মীয় আচার পালনে তাই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সাধারণত আমাদের দেশে রমজান শুরুর আগে বাজারে নানা পণ্যের চাহিদা থাকে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। আর সেই সুযোগে এ সময়ে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি এবং দাম বৃদ্ধিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে একশ্রেণির অসাধু চক্র। ফলে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়ে ওঠে অত্যন্ত কঠিন। প্রতিবারের মতো এবারও সে চিত্রের ব্যত্যয় ঘটেনি। এরই মধ্যে বেড়ে গেছে চাল-ডাল ভোজ্যতেলসহ অন্য নিত্যপণ্যের দাম। রমজানের শুরুতে নিত্যপণ্যের দাম যে আরও এক দফা বাড়বে সেটা অনুমিতই ছিল। কারণ, দেশের বাজারে এ সময়ের অতীত চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি একটি অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপণ্য দামের উত্তাপ বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রমজান শুরুর আগে যেসব পণ্যের দাম ছিল ১৫০ টাকা; এবার তা কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মসলা, ডিম, মুরগি, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত; যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। বাজার-সংশ্লিষ্টরা এর কারণ হিসেবে আমদানি জটিলতা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে দায়ী করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী ভোক্তার পকেট কাটছে। এর প্রতিকারে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
আমরা জানি এ বছরই খাদ্যে ভেজাল, মজুতদারি, কালোবাজারি এবং নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির হোতাদের ব্যাপারে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার হুঁশিয়ার করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি আবারও বলেছেন, সামনে রমজান মাস। এ সময় আমাদের কিছু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ রমজান মাস কৃচ্ছ্রসাধনের সময় এবং মানুষ যাতে ভালোভাবে তাদের ধর্মকর্ম এবং রোজা পালন করতে পারেন, সেদিকেই সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সে সময় এসব মুনাফালোভী জিনিসের দাম বাড়ানো আর মানুষকে বিপদে ফেলার কোনো মানে হয় না। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীর কথায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, রমজান মাসে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না। কিন্তু আমরা দেখছি, রমজানের আগে বাজারের চিত্র স্বাভাবিক নয়। তাহলে তো এটাই প্রমাণিত হয় যে, কৃত্রিম সংকটের নেপথ্যের অশুভ চক্রকে কোনোমতেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আমরা সবাই জানি এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। কেননা—এক বছরেরও অধিক সময় রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার-সংকট, পরিবহন ব্যয়বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে এমনিতেই সারা বিশ্ব অস্থির। তা সত্ত্বেও দেশের বাজারে কালোবাজারি, মুনাফাখোর ও মজুতদারদের দৌরাত্ম্য চলছেই।
প্রধানমন্ত্রীর মতো আমরাও বলতে চাই, নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা একটি ‘গর্হিত কাজ’। আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাজারে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। কারসাজির মাধ্যমে যারা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে বিকল্প জোগানের দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।