
রাজীব গান্ধীর পুরো নাম রাজীব রত্ন গান্ধী। তিনি ছিলেন ভারতের ষষ্ঠ এবং কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৪ সালে ৩১ অক্টোবর মাত্র ৪০ বছর বয়সে মা ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। ইন্দিরা গান্ধী ও ফিরোজ গান্ধীর জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজীব গান্ধী ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির সাবেক সভাপতি এবং ভারতের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কংগ্রেস আর গান্ধী পরিবারের নাম। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী প্রত্যেকেই ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রেখেছেন অবিস্মরণীয় ভূমিকা। ১৯৮৯ সালের ২ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের পর পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
রাজীব গান্ধী ১৯৪৪ সালের ২০ আগস্ট ভারতের বোম্বাই (অধুনা মুম্বাই) শহরে বিখ্যাত রাজনীতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান এবং এক বছর পরে কোনো ডিগ্রি ছাড়াই তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজ পরিত্যাগ করেন। রাজনীতিতে পদার্পণের আগে রাজীব ছিলেন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের এক পেশাদার বিমানচালক। কেমব্রিজে থাকাকালীন ইতালীয় বংশোদ্ভূত সোনিয়া মাইনোর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে ১৯৬৮ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মা দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও ১৯৮০ সালে ছোট ভাই সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজীব রাজনীতি থেকে দূরেই ছিলেন। ১৯৮৪ সালে অপারেশন ব্লু স্টারের প্রতিক্রিয়ায় আততায়ীর হাতে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হলে জাতীয় কংগ্রেস নেতারা রাজীবকেই দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন। রাজীব গান্ধী লাইসেন্সপ্রথা, শুল্ক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্য অনুমতি প্রদানের নিয়মনীতি ঢেলে সাজান। টেলিযোগাযোগ ও শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিসাধনসহ নানা কাজ শুরু করেন।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত রাজীব গান্ধী ছিলেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। এ বছরই একটি নির্বাচনী জনসভায় জনৈক এলটিটিই জঙ্গির আক্রমণের শিকার হন। এর আগে ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধী প্রশাসন মালদ্বীপের সামরিক অভ্যুথান ব্যর্থ করে দিলে পিপলস লিবারেশন অর্গানাইজেশন অব তামিল ইলমের (PLOTE) মতো অন্য একটি জঙ্গি তামিল গোষ্ঠীর সঙ্গেও শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এই শত্রুতার জেরে ১৯৯১ সালের এই দিনে শুধু বিরোধের জের ধরে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের শ্রীপেরামবুদুরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় রাজীব গান্ধীকে। পতন হয় একটি নক্ষত্রের। ভারতের ইতিহাসে এই হত্যাকাণ্ড রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। বোমা বিস্ফোরণে রাজীব ছাড়াও আরও ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮ সালে তার স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেস সভানেত্রী নির্বাচিত হন এবং ২০০৪ সালে তার নেতৃত্বে কংগ্রেস লোকসভায় জয়লাভ করে। তার ছেলে রাহুল গান্ধী সংসদ তথা সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক।