অজয় দাশগুপ্ত
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশ ও সমাজকে যা পারতেই হবে

দেশ ও সমাজকে যা পারতেই হবে

‘মহামারি আর যুদ্ধের সংকটে তিনটি বছর পার করা এ পৃথিবীর আগামী বছরটাও যে অর্থনৈতিকভাবে ভালো যাবে না’—সেই পূর্বাভাস বিশ্ব সংস্থাগুলো দিয়ে আসছে। খোদ সরকারপ্রধান বারবার দুর্ভিক্ষের শঙ্কার কথা বলে সতর্ক করে আসছেন দেশবাসীকে। সত্যি সত্যি যদি তেমন বিপদ আসন্ন হয়, তা সামাল দিতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। মহামারির ছোবল এখনো শেষ হয়নি। চীনে সংক্রমণ আতঙ্কের পর্যায়ে। আমাদের দেশের বিনিয়োগে চীনের বড় ভূমিকা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে সে দেশ থেকে মানুষ আসবে-যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর ফাঁকেই রয়ে যাচ্ছে পুনর্বার মহামারি ছড়িয়ে পড়ার দুর্ভাবনা। বাংলাদেশের এয়ার ট্রাফিক এবং বিমানবন্দরের সতর্কতা আবশ্যক হলেও আমরা ততটা সাবধান কিনা এ নিয়ে কথা আছে। এখানে যেটা বলা দরকার, সামান্য অবজ্ঞা আর অবহেলায় ইউরোপ গতবার যে শাস্তি ভোগ করেছে এবং পরবর্তীকালে পৃথিবী করোনায় যে মাশুল গুনেছে, তা যেন আবার ফিরে না আসতে পারে।

নিন্দুকরা যাই বলুক, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ অগ্রসরমাণ একটি দেশ। তার সঙ্গে টেক্কা দিতে পারছে না পাকিস্তান। মাঝে মাঝে ভারতও হিমশিম খাচ্ছে নানা খাতে। সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা খারাপ কিছু না। এ কথা বললে বা লিখলে সুশীলদের মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ তারা চায় ভঙ্গুর একটা অর্থনীতি আর বিবদমান সমাজ থাকুক। তাতে সবার লাভ না হলেও তাদের লাভ। তাদের টক শো বা বলার বিষয় পাওয়া যায়। সমালোচনার ডালপালা ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করা যায় সহজে। তারা যাই বলুক, একটা কথা সত্য, বিপদের ঝুঁকি যায়নি। বরং আরও বাড়ছে।

এ বিপদের মুখ অনেকগুলো, তার কয়েকটা এরই মধ্যে বাংলাদেশ দেখতে শুরু করেছে। টানা কয়েক বছর বাড়তে থাকা বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার এখন নিম্নমুখী। বিশ্বের জ্বালানি বাজারের অস্থিরতা ফিরিয়ে এনেছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সহসা খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত এখনো সরকারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক সংকটে মূল্যস্ফীতি বহু বছর পর এখন ৯ শতাংশের ওপরে থাকছে। তাতে নিম্ন আর মধ্যবিত্তের সংসার সামলাতে উঠছে নাভিশ্বাস। আর বিশ্ব খাদ্য সংস্থা খাদ্য সংকটের যে ঝুঁকির কথা বলছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের নামও আছে।

যারা তাত্ত্বিক তারা এসব ভালো বলতে পারবেন। আমরা খোলা চোখে দেখছি অসুবিধা বা সংকট আসন্ন। এমন না যে বাংলাদেশ পথে বসবে। কিন্তু মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস এখন স্পষ্ট। ধনী বা উন্নত দেশ নামে পরিচিত দেশগুলোর সরকাররা তাদের যাবতীয় মাধ্যম ও সম্বল নিয়ে তৈরি হচ্ছে। মানুষকে বাঁচানো আর নাগরিকের জীবন সম্মান বজায় রাখার স্বার্থে তাদের উদ্যোগ এখন চোখে পড়ছে। আমাদের দেশে যে সরকার চেষ্টা করছে না তা নয়। কিন্তু রাজনীতি কিছুই মানে না। মানতে চায় না। অদ্ভুত এক রাজনীতি লালন করি আমরা। যখন সংকট ঘনীভূত হয় তখন যা দরকার বা যা যা করা উচিত তার কিছুই করে না রাজনৈতিক দলগুলো। তারা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংকট মোকাবিলার কথা ভাবলে মঙ্গল হতো। তার বদলে হিংসা আর আগ্রাসী মনোভাবে সরকার ও বিরোধী দলের সংঘাত মনে হচ্ছে আসন্ন। যা কারও জন্য ভালো হবে না।

সাধারণ মানুষের দিকে তাকান। তাদের মুখ বন্ধ কিন্তু অন্তর জ্বলছে। হাহাকারের নানা রূপ থাকে। এখনকার হাহাকার মোবাইল বা ডিজিটালের আড়ালে আছে বলে বোঝা যায় না। যখন তা বের হয়ে আসে তখন তার চেহারা হয় ভয়ংকর। ফলে সাবধান হওয়ার বিকল্প নেই। সাধারণ বলতে যদি মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের কথা বলি, তাদের ঘরে নিত্যদিনের পণ্য চাল-ডাল-তেল বা ডিম নেই পর্যাপ্ত। এগুলো আমাদের দেশের অতি সাধারণ পরিবারের সাধারণ খাবার। ডিম-মাংস-মাছের উৎপাদন নিয়ে যত পরিসংখ্যানই থাক, আসলে এগুলো এখন হাতের বাইরে তাদের। এ অধরা পণ্যগুলোই একসময় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। দেশের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত বোঝে? তাদের মূল বিষয় জীবনধারণ। আজকের সমাজে একশ্রেণির মানুষ ইচ্ছেমতো খায়, ঘুরে বেড়ায়, অঢেল খরচ করে। এদের দেখে আসল পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। আওয়ামী লীগের টানা তিন শাসন আমলে সাধারণ মানুষের অবস্থা নিশ্চিতভাবেই ভালো হয়েছে। জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এ কথা স্বীকার করতে হবে, একটি বিশেষ শ্রেণি এর আগে কখনো এভাবে ফুলেফেঁপে বড় হতে পারেনি। এই কথিত বড় হওয়া কিন্তু কারও কল্যাণে আসেনি। এরা নিজেরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। সবচেয়ে বড় কথা, এসব ধনীর জানা নেই কোথায় থামতে হয়।

আসন্ন সংকটের কথা মাথায় রেখে বলতে হয়, এরা কোনো সংকটে পাশে দাঁড়ায় না। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি সবসময় সোজাসাপ্টা কথা বলেন। নানাভাবে তিনি এদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও তাদের মন গলে না। মন না গলার মূল কারণ আজকের বাংলাদেশে কারও জানা নেই এক জীবনে কত টাকার দরকার হয়। এই যে শত শত কোটি কোথাও হাজার কোটির গল্প, এ টাকা দিয়ে এরা কী করবে? তারা নিজেরাও এর উত্তর জানে না। টাকা কামানো অবৈধ অর্থে বিত্তশালী হওয়ার নেশায় মত্ত এরা সংকটের আরেকটি কারণ।

সংকট বা বিপদ বলেকয়ে আসে না বলেই মানুষ তৈরি হতে পারে না। কিন্তু এবারের সংকট বলেকয়ে হানা দিচ্ছে। কাজেই কারও সুযোগ নেই দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার। বরং মানুষ রুদ্ধশ্বাসে দেখছে তাদের জন্য কে কী করছে। বলাবাহুল্য, এর ভেতরেই থাকবে তাদের জবাব। থাকবে মোকাবিলা। বাংলাদেশ কোনো বিপদে পড়ুক এটা আমরা কেউ চাই না। চাই না বলেই সবাইকে কথা বলতে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। মানুষ যত বলবে তত জানা যাবে কোথায় সংকট, কোথায় এর উৎস। তখনই প্রতিরোধ হবে সম্ভবপর। দুনিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে সংকটকে উড়িয়ে দিক, এটাই সবার চাওয়া। রাজনীতি তা না পারলেও সমাজ বা দেশকে পারতেই হবে।

লেখক : সিডনি প্রবাসী, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হঠাৎ বার্সা কোচের ‘ইউটার্ন’

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

তীব্র গরমের মধ্যেই শিলাবৃষ্টির আভাস

যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির দুই নেতাকে শোকজ

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য পাকিস্তানে যাচ্ছে না ভারত!

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান আটকে দিল কুমির, ভিডিও ভাইরাল

কী আছে আজ আপনার ভাগ্যে

নাটোরে ইসতিসকার নামাজ আদায়

শ্রমিক সংকটে বোরো চাষিরা

১০

২৮৮ সেনা-বিজিপি সদস্যদের মিয়ানমারে হস্তান্তর

১১

পোস্ট অফিসে আইসক্রিমের ব্যবসা

১২

৪০ দিন আগেও প্রস্তুত নয় বিশ্বকাপের ভেন্যু

১৩

ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

১৪

ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করে কঠিন বার্তা হিজবুল্লাহর

১৫

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১৬

বোরো আবাদে হিটশকের শঙ্কা

১৭

এসির ‘টন’ মানে কী?

১৮

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার বানিয়ে প্রচারে আ.লীগ নেতা

২০
*/ ?>
X