বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক

১৬ মার্চ, মঙ্গলবার ১৯৭১। শাসনতান্ত্রিক সংকট প্রশ্নে এদিনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে প্রথম দফা বৈঠক করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু বেলা ১১টায় তার সাদা মাজদা গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাসে এদিন সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট ভবনে ‘কালো পতাকা’ প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করলে জেনারেল ইয়াহিয়া বারান্দায় এসে তাকে অভ্যর্থনা জানান। গাড়ি থেকে নেমে বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সরাসরি রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু করেন। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর দুপুর দেড়টায় বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হন।

সদালাপী বঙ্গবন্ধু এদিন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সবচেয়ে কম কথা বলেন। আলোচনা শেষে দেশ-বিদেশের শতাধিক সাংবাদিকের উপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি মাত্র তিনটি পূর্ণবাক্য উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আলাপ আলোচনা চলতে থাকবে। সমস্যা এমন নয় যে, দুই তিন মিনিটের মধ্যেই সমাধান করা যায়।’

জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনার পরে বঙ্গবন্ধু দলীয় অপরাপর নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেন। রাত সাড়ে ৮টায় আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড রুদ্ধদ্বার কক্ষে আলোচনা শুরু করে। এ আলোচনা গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, ড. কামাল হোসেন অংশ নেন।

অন্যদিকে ইতিপূর্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি ভুট্টো দেশের দুই অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে অভিনব ফর্মুলা দেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের দুই অংশেরই রাজনৈতিক মহলে এদিন সমালোচনার ঝড় ওঠে। রাজনীতিকরা ভুট্টোর এ ফর্মুলাকে একনায়কবাদী এবং মেকিয়েভলি রাজনীতির নিদর্শন বলে আখ্যায়িত করেন। এমনকি করাচির বিশিষ্ট নাগরিকরা ভুট্টোর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন। স্বাধিকার আন্দোলনের সমর্থনে এদিন ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশে সভা, মিছিল ও শোভাযাত্রায় মুখরিত ছিল এবং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখার সংকল্প করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোর্ট-কাচারি বন্ধ ছিল। নির্দেশ অনুযায়ী সড়ক ও নৌপথে সব যানবাহন চালু ও হাটবাজার, দোকানপাট, কলকারখানা, ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। এদিন দুপুরে ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রথম দফা আলোচনা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে জনগণের মুক্তি সংগ্রাম অব্যাহত রাখার সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। তারা সরকার ও পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি ভুট্টোর বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়। আর ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া গ্রুপ) কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী এদিন এক বিবৃতিতে মণি সিংহসহ সব রাজবন্দির মুক্তির আদেশ দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে আবেদন করেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com