ফাইরুজ নাহিয়ান
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাজারমূল্য ও ভেজাল নিয়ন্ত্রণে দরকার বিশেষ টাস্কফোর্স

বাজারমূল্য ও ভেজাল নিয়ন্ত্রণে দরকার বিশেষ টাস্কফোর্স

ঘটনাগুলো সবার জানা। গত কদিন ধরে দেশ-কাঁপানো একটার পর একটা দুর্ঘটনা ও প্রচারের ভিড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে মানুষ। হিরো আলম বনাম মামুনুর রশীদ। তারপর প্রথম আলোর শামসকে তুলে নিয়ে যাওয়া। সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু না হত্যাকাণ্ড? এসব তর্কের মীমাংসা হওয়ার আগেই বাজার গরম করে ফেলেছে স্বাধীনতাবিষয়ক প্রথম আলোর পোস্ট ও ছবি। বলা বাহুল্য এটাই এখন সামাজিক মিডিয়ার ফলাফল। একটা শেষ হওয়ার আগেই আর একটা এসে জায়গা দখল করে। চাপা পড়ে যায় বাকিগুলো।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সুশীল সমাজ সমর্থন করতে পারে না। এমন হত্যা বা মারা যাওয়া অনভিপ্রেত। তারপরও ঘটছে এসব। জেসমিনের ঘটনার সুরাহা কবে হবে, আদৌ হবে কি না—বলা মুশকিল। কিন্তু যে ঘটনা আমাদের বিবেক বুদ্ধি ও মগজকে গ্রাস করে আছে তার জবাবদিহিও জরুরি। বাংলাদেশ পাকিস্তান রাষ্ট্রটি থেকে পৃথক হয়েছিল যেসব কারণে তার অনেক ইতিহাস বাকি এখনো। কেউ আর সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না। এই যে ফ্রিডম অব প্রেস নিয়ে কথা হচ্ছে প্রথম আলো কি নিজেরাই তা মানে? আমার মনে আছে, কলাম লেখার সময়কালে অল্প কিছু লেখা আমি প্রথম আলোয়ও লিখেছিলাম। কিন্তু তারা লেখার বা লেখকের স্বাধীনতার বেলায় কট্টর ও আপসহীন। তাদের এক কথা, আমাদের কাগজে লিখলে আর কোথাও লেখা যাবে না। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না আমার জন্য। তখন আমি সবে লিখিয়ে হয়ে উঠেছি। পনেরো বছর, তেরো-চৌদ্দ বছর আগে প্রথম আলোর মতো জনপ্রিয় মাধ্যমকে ছেড়ে আসা ছিল কঠিন। কিন্তু আমি তা পেরেছিলাম। আমার দুটি যুক্তি ছিল। এক, আমি তো তাদের বেতনভুক সাংবাদিক বা কলাম লেখক না, তাহলে আমাকে আটকানো কেন? দুই, এটা কেমন শর্ত যে আমাদের কাগজ সবার চেয়ে বেশি চলে বলে আমরা আর কোথাও লিখতে দেব না? হয়তো দেশে থাকলে আমি এই শর্ত মেনেই চলতাম। কিন্তু বিদেশে থেকে কেবল একটি সংবাদপত্রের ওপর নির্ভর করা অনুচিত। যখন কি না তারা প্রয়াত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবালের বেলায়ও তাদের কমিটমেন্ট মানেন না। সময় উত্তরদাতা। প্রথম আলো যত জনপ্রিয় হোক না কেন, তাদের তৈরি কলাম লেখকের ভাঁড়ার আদপে শূন্য। পোষ্য কয়েকজন ছাড়া তাদের পত্রিকার লেখকেরা মৌসুমি।

প্রশ্ন হচ্ছে—তাই বলে কি আমি শামসুজ্জামানকে মধ্যরাতে তুলে নিয়ে যাওয়া সমর্থন করব? কখনোই না। শ্রদ্ধাভাজন অগ্রজ সম্পাদক আবেদ খান। তিনি যখন কালের কণ্ঠের সম্পাদক তখন আমিও সেখানে নিয়মিত লিখতাম। বসুন্ধরা গ্রুপ এবং মতিউর রহমানদের দ্বন্দ্ব যখন চরমে তখন শুরু হয়ে গেছিল কাদা ছোড়াছুড়ি। সেই কদর্যতার সময় আবেদ খান সাহসের সঙ্গে মতি ভাইয়ের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা না লেখার পক্ষে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন। এই সৌজন্য ও মানবতাবোধ মতি ভাইয়ের কতটা আছে তা আমার জানা নেই। কারণ কার্টুনিস্টের দুর্যোগ সময়ে তিনি মাফ চেয়ে ‘তওবা সম্পাদক’-এর অভিধা মেনে নিলেও কার্টুনিস্টের পক্ষে তারা তেমনভাবে দাঁড়াননি। দাঁড়াতে পারেননি। বন্ধু লেখক কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের সামাজিক মিডিয়ার পোস্ট থেকে খানিকটা উদ্ধৃত করতে চাই : “‘প্রথম আলো’ একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দৈনিক। উদ্দেশ্যসাধনে লাগসই না হলে র্যাবের হেফাজতকালীন ‘আপ্যায়ন’-এ নওগাঁর সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর মতো অধিকতর দুঃখজনক ও নিন্দনীয় সংবাদ শামসুজ্জামানের সংবাদটির মতো মেদবহুল গুরুত্ব দূরে থাক, প্রাপ্য ট্রিটমেন্টের সিকিভাগও পায় না। এ-ও দেখেছি—‘প্রথম আলো’য় প্রকাশিত একটি ছোটোগল্পে একইরকম ভুল করায় কীর্তিমান ভাষাচিত্রী হাসনাত আব্দুল হাই (Hasnat Abdul Hye) যখন গণরোষের শিকার, পত্রিকাটি তার পাশে দাঁড়ায়নি। তারপরও শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে ‘শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়া এবং স্বাধীনতার প্রত্যয়’ শীর্ষক যুগপৎ মানবিক ও আত্মপক্ষসমর্থনমূলক গদ্যটির জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি আনিসুল হককে। প্রত্যাশা এই যে, ‘প্রথম আলো’র বা কোনো সহকর্মীর সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও সমগোত্রীয় ঘটনায় সমব্যথী হয়ে তিনি এক প্রকার গদ্য লিখে নৈর্ব্যক্তিক মানবিকতার পরিচয় দেবেন।” একেই বলে আপনি আচরি ধর্ম পরকে শিখাবে।

বিষয়টা সহজ না। স্বাধীনতা দিবসের দিন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নামে পরিচিত দৈনিক এমন একটা ভুল করবে এটা কি অভিপ্রেত? নাকি এটা মানা যায় যে, তারা ভুল করেই সতেরো মিনিটের মাথায় তা বুঝে গিয়েছিল? আমরা অনেকেই ভুলে যাই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে নন্দিত সাধারণ সম্পাদক আশরাফ ভাইয়ের বেলায়ও নির্মম নিষ্ঠুরতা করেছিলেন তারা। সেই অডিও টেপটি নিশ্চয়ই মনে আছে অনেকের। স্বাধীনতা দিবস বা এই মার্চ মাসে বাংলাদেশের মানুষ দুধের সাগরে ভাসছে না। বরং বিগত কয়েক বছরে এমন অভাব অনটন চলছে যা কল্পনাতীত। একদিকে বিলাস পাঁচতারা হোটেলে দশ হাজার টাকার ইফতারি ফুরিয়ে যাচ্ছে নিমেষে, অন্যদিকে মানুষ মাসের পর মাস মাংস খেতে পারছে না। এটা সত্য। এটাও সত্য, দেশে লুটপাট আর সুশাসনের অভাব প্রকট। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের আঙুল ফুলে কলাগাছ শ্রেণির পাচারকৃত অর্থ সম্পদ বহু দেশের বাজেটের সমতুল্য প্রায়। চারদিকে দুর্নীতি আর দুঃশাসন। শেখ হাসিনা একা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু মিউজিশিয়ানদের সকলে যদি লিডারের নির্দেশমতো কাজ না করে বা সাড়া দিতে না পারে বাজনা বেসুরো হবেই। তাল কেটে যাবেই। হচ্ছেও তাই।

স্বাধীনতা দিবসকে অপমান করা উদ্দেশ্য ছিল, নাকি প্রশ্নবোধক করার চেষ্টা ছিল, সে তর্ক ও ধুলায় মিশে গেছে মধ্যরাতে বা ভোররাতে তুলে নিয়ে যাওয়া আর মামলার কারণে। এই বিষয়গুলো জোর-জবরদস্তির বিষয় নয়। বরং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর আইনের সঠিক ব্যবহারেই তা করা যেত। যে সাংবাদিক এখন হাজতে তার বড় ভাই গুলশান হলি আর্টিজান হামলার সময় জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ দেওয়া পুলিশ সদস্য। সংগত কারণেই তাদের পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ও মায়া থাকবে মানুষের। সবচেয়ে বড় কথা যেটি, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যদি মানুষ কথা বলতে না পারে, ভয়ে থাকে; তবে আর বলবে কখন? আর কথা বলার স্বাধীনতা যে, যা খুশি তা করা বা লিখে দেওয়া না, সেটাইবা আমরা বুঝব কখন?

সংবাদপত্র বা মিডিয়ার ওপর যে কোনো আক্রমণের বিরোধী আমি। তুলে নিয়ে যাওয়া সাংবাদিক একজন কর্মচারী মাত্র। তার মুক্তি চাই। তাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হোক। বন্ধ হোক ভবিষ্যতে দশ টাকার বিনিময়ে এমন অসত্য খবর পরিবেশন। আজকের বাংলাদেশ যে নানাভাবে এগিয়ে গেছে সেটা সত্য। এই অগ্রযাত্রা যেন ফাঁদে পড়ে নিজের ইমেজ না হারায়। তা ছাড়া কারও বিরুদ্ধে মামলা বা কাউকে নিয়ে গেলেই এসব সমস্যার সমাধান হবে না। বরং বাড়বে। আমজনতার ভেতর রাগ অভিমান বেদনা আর ক্রোধ পুঞ্জীভূত হয়ে গেছে। মানুষ আন্তর্জাতিক বাজার বোঝে না। তারা চাল-ডাল-তেল-মাংস-মাছ ও নিজেদের খাবার খেতে চায়। পরিবার পরিজন নিয়ে রোজার মাসে যারা কষ্টে আছেন, এসব তর্ক আর মামলায় তাদের কোনো লাভ নেই। তাদের কারণেই সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধানের পথ বের করে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলা জরুরি। সত্যি কথা এই, কাউকে ভয়ভীতি বা মামলার ভেতর দিয়ে যে দমন করা যায় না বঙ্গবন্ধুই তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। স্বাধীনতা ও শুভবুদ্ধি দুটোই এখন জরুরি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, সিডনি প্রবাসী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশের উন্নতি দেখে আমাদের লজ্জা হয় : পাক প্রধানমন্ত্রী

শাহজাদপুরে বৃষ্টি কামনায় ইসতেসকার নামাজ আদায়

চুয়েটে উপাচার্য অবরুদ্ধ, হল না ছাড়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ৬০ বছরের বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

নাভালনির শেষকৃত্য করা সেই পুরোহিতকে চরম শাস্তি

চরমোনাই পীরের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা 

গাজীপুর ওয়ালটন এসি কিনে মিলেনিয়র হলেন স্যানিটারি ব্যবসায়ী

শূন্য রানে ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড

ইরান-ইসরায়েল সংকট ও মধ্যপ্রাচ্যের নয়া ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ

রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

১০

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে অস্থিতিশীল করছে যুক্তরাজ্য : অ্যামনেস্টি

১১

ফেরত পাঠানো হলো মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও সীমান্তরক্ষী সদস্যকে

১২

অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার পদে ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরি

১৩

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো কিছুর সম্ভাবনা দেখছেন সাকিব

১৪

মেট্রোরেল সাভার পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন

১৫

গরুর দুধে প্রাণঘাতী ভাইরাস শনাক্ত, আক্রান্ত এক ব্যক্তি

১৬

সমুদ্র সৈকতে ভয়ংকর বিষধর সাপ, আতঙ্ক

১৭

রাজধানীর যে ২০ স্থানে বসছে পশুর হাট

১৮

শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন আইন

১৯

‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্কলার্স কাপ ২০২৪’ / শুরু হলো জমজমাট বুদ্ধির লড়াই!

২০
*/ ?>
X