স্থাপত্যবিদ্যা ও প্রকৌশল শাস্ত্রকে তাক লাগিয়ে সৌদি আরবের যুবরাজ, প্রধানমন্ত্রী এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ নির্মাণ করে চলেছেন নানা ধরনের নিত্যনতুন স্থাপনা। তদুপরি তিনি আল সৌদ রাজদরবারের প্রধান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিবেচনাকারী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে বেসরকারি খাতে, বিশেষত পর্যটন খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগে নির্মিত হয়েছে একটি ঝুলন্ত মসজিদ। স্থাপনা জগতের সাম্প্রতিক বিস্ময় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৮৩ মিটার উচ্চতায় এবং হোটেল-সংলগ্ন রাস্তা থেকে ১৭৯ মিটার উচ্চতায় স্থাপিত হয়েছে ঝুলন্ত মসজিদটি। চলতি বছরের শুরুতে মসজিদটি চালু করে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছে সৌদি আরব। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস মসজিদটিকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ঝুলন্ত মসজিদের স্বীকৃতি দিয়েছে।
সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে সংগতি রেখে পবিত্র মক্কা নগরীতে নির্মিত হয়েছে জাবালে ওমর টাওয়ার। বায়তুল্লাহর পাশেই জাবালে ওমর মক্কা হোটেলের দুটি টাওয়ারের সংযোগকারী সেতুর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ঝুলন্ত মসজিদ নির্মাণের সৌভাগ্য অর্জন করল সৌদি আরব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৮৩ মিটার উচ্চতার এবং হোটেলসংলগ্ন রাস্তা থেকে ১৭৯ মিটার উচ্চতায় এ মসজিদ প্রায় ৫৩ তলা ভবনের সমান উচ্চতায় অবস্থিত। ঝুলন্ত মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটি শুধু প্রকৌশলের একটি কীর্তিই নয়, বরং স্থাপত্য দক্ষতা ও সৃজনশীল দক্ষতার প্রমাণ। বিস্ময়কর এ স্থাপত্য থেকে পবিত্র কাবা শরিফ ও মক্কার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় স্থানগুলোর অসাধারণ ও চমৎকার সব দৃশ্য দেখা যায়। সার্বিকভাবে টাওয়ার থেকে পবিত্র কাবা ছাড়াও মক্কা মিউজিয়াম, মসজিদুল জিন, জান্নাতুল মোয়াল্লা কবরসহ অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা অবলোকনের ব্যবস্থা রয়েছে।
বিশ্ববিখ্যাত স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান মাস্টার অ্যান্ড পার্টনার টাওয়ারটি ডিজাইন করে আর সৌদি আরবের স্বনামধন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মক্কা রিয়াল স্টেট অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশেষভাবে ডিজাইন করা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এ মসজিদ ও জাবালে ওমর টাওয়ার নির্মাণ করে। কোম্পানির পরিচালক আনাস সালেহ সাইরাফির মতে, সাধারণ বিল্ডিংয়ের সঙ্গে মেলাতে গেলে মসজিদটির উচ্চতা হবে ৫৩ তলা ভবনে সমান। জাবালে ওমর টাওয়ার থেকে মুসল্লিরা পবিত্র কাবা শরিফের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃশ্য সরাসরি দেখতে পাবেন। পাশাপাশি মসজিদের ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমের সমন্বয় করা হয়েছে কাবা শরিফের সঙ্গে। মসজিদটির আয়তন ৫৫০ বর্গমিটার। এখানে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ২০১৯ সালে এ টাওয়ারের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত অবিরাম চলে এ নির্মাণযজ্ঞ। অন্যদিকে জাবালে ওমর টাওয়ারটি প্রায় ৫ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর নির্মিত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৪৮৪টি কক্ষ রয়েছে। টাওয়ারের আকর্ষণীয় স্থাপত্য নকশায় প্রাচীন আরবীয় ছাপ রয়েছে।
প্রযুক্তি ও বিশেষভাবে ডিজাইন করা যন্ত্রাংশ দিয়ে প্রথমে এ সেতুটি মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে এটি আরও উঁচুতে নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করা হয়। স্ট্রিলের তৈরি সেতুর ওজন ৬৫০ টন। এটির মাধ্যমে হোটেলটির দুটি ভবনের ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ তলাকে একসঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। মসজিদটির ভেতর আরব ও ইসলামিক সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া সাজানো হয়েছে আকর্ষণীয় আরবি ক্যালিগ্রাফি।
এ মসজিদটিতে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা ফজরের নামাজের পর মক্কার ওপর সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার সুযোগ পান। একই সঙ্গে পবিত্র কাবার পেছনে সূর্য ডোবার নান্দনিক মুহূর্ত মুসল্লিরা উপভোগ করতে পারেন মাগরিবের নামাজের পূর্বমুহূর্তে। টাওয়ারের ভেতরে প্রবেশ না করলেও আশপাশের এলাকা থেকে দেশ-বিদেশের হাজিরা এ ঝুলন্ত মসজিদ প্রত্যক্ষ করেন।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর, গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট