চাপের কাছে নতিস্বীকার নয়, অতীতের মতো দৃঢ় হতে হবে

চাপের কাছে নতিস্বীকার নয়, অতীতের মতো দৃঢ় হতে হবে

দেশি-বিদেশি সব ধরনের চাপ উপেক্ষা করে দেশ এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাওয়ার ‍দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে। কারণ, আমার শক্তি একমাত্র জনগণ আর ওপরে আল্লাহ। আমার বাবার আশীর্বাদের হাত মাথায় আছে। কে কী চাপ দিল, এতে আমাদের কিছু আসে-যায় না। জনগণের স্বার্থে, কল্যাণে যেটা করার সেটাই করব।’ সোমবার গণভবনে কাতার সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ কথা মিথ্যে নয় যে, আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে, সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি মহলের চাপ ততই বাড়ছে। তবে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে এসব চাপ দৃঢ়ভাবে উপেক্ষা করার প্রবণতা যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আছে তা আমরা অতীতে একাধিকবার প্রত্যক্ষ করেছি। এর একটি বড় উদাহরণ হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন। বাঙালির সক্ষমতা আর গর্বের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের স্থাপনা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত অধ্যায়। ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়ে যাওয়ার পরও ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হঠাৎ প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। নানা চেষ্টায়ও শেষ পর্যন্ত আর ফেরানো যায়নি বিশ্বব্যাংককে পদ্মা প্রকল্পে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর আগের বছর ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে ড. ইউনূসকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এটি দিয়েই বিশ্বব্যাংককে পদ্মাবিমুখ করার পেছনে প্রভাবিত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানো আর নানা সমালোচনার মধ্যেও নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৩ সালে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় সরকার। সংশয় ছিল অনেকের মধ্যে কতটা বাস্তবে রূপ নেবে স্বপ্ন। তবে সব সমালোচনা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।

আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও আমরা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের চাপ লক্ষ করেছি। শেখ হাসিনার সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে, তখন অনেক বাধার সৃষ্টি হয়। দেশের বাইরের রাষ্ট্রপ্রধানরাও এ বিচারে অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে টেলিফোন করে কথাও বলেন। তিনি তাদের শুধু একটি কথাই বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা অপরাধ করেছিল তাদের বিচার তো এখনো হচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছে, হত্যা করেছে, তাদের বিচার হবে না কেন? অর্থাৎ সব ধরনের চাপ উপেক্ষা করে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার করা হবে না বলে আইন করা হয়েছিল; ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স আইন বাতিল করলে জাতির পিতার পরিবারের হত্যার বিচারের কাজ শুরু হয়। সে সময় সরকারের ওপর অনেক চাপ আসে।

আগামী নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকার যে নানামুখী চাপের সম্মুখীন হবে এ কথা বলাইবাহুল্য। আমাদের প্রত্যাশা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সব ধরনের দেশি-বিদেশি চাপ উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা এগিয়ে নেওয়ার জন্য অতীতের মতোই দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করবেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com