বর্তমান বিশ্বে সৎ, সাহসী, দৃঢ়চেতা, আত্মবিশ্বাসী, পরিশ্রমী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা কে? এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বোধকরি আজ আর কোনো জটিল বিষয় নয়। সম্ভবত এর বিকল্প কোনো উত্তরও নেই। এ প্রশ্নের একমাত্র উত্তর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি, একটানা তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অকাট্য স্বীকারোক্তি আজ শুধু বাংলাদেশিদেরই নয়, বরং বিশ্ব নেতৃত্বই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিনিয়ত অভিহিত করছেন প্রশংসাসূচক নানা অভিধায়। একনিষ্ঠ দেশপ্রেমের আভিজাত্যে, রাজনৈতিক সৌকর্যে, রাষ্ট্র পরিচালনার মুনশিয়ানায়, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার দূরদর্শিতায়, মানবিক ঔদার্যে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, একজন সফল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক বিশ্বনেতা।
গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর তার অর্জনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যগাথার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের সরকারপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাপ্রধানরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিকাল নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বিশ্বে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে, সে কথাগুলোও বিশ্বনেতারা স্মরণ করেছেন অকপটে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সফরটি অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা অভিমত দিয়েছেন।
সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’ তিনি এও বলেছেন, ‘আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি। আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন, তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী তার (শেখ হাসিনা) বড় ভক্ত। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার মেয়েরা শেখ হাসিনার মতো মহান নেতা হবেন এ কামনা করেছেন এবং এও বলেছেন, ‘আপনি আমার দুই মেয়ের জন্য মহান অনুপ্রেরণা।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, ভূমিহীন ও গৃহহীন বাংলাদেশের জনগণকে সরকারি খরচে বাড়ি দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তার গৌরবময় ভূমিকার প্রশংসা করেন। করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ে ৬ শতাংশের অধিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার কথা উল্লেখ করে ঋষি সুনাক আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বর্ণনা করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে যেমন অনুপ্রেরণা বলছেন, ২০২১ সালের ২২ মার্চ বাংলাদেশ সফরে এসে নেপালের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘আপনি বিশ্বের দারুণ এক অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা। আমি আপনার অনুরাগী।’
অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম ক্যারিশম্যাটিক নেতা শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জাপান সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও উচ্চপর্যায়ে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি করেছে। জেগেছে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও। বাংলাদেশে জাপানের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিনিয়োগসহ এ সফরে হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক দুই দেশের অংশীদারত্বে নবযুগের সূচনা করতে যাচ্ছে। অতীতের যে কোনো সফরের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফর বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ বিলিয়ন ইয়েনের বাজেট সহায়তা ছাড়াও কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তাসহ আটটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর হয়েছে জাপান সরকারের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরের ধারাবাহিক শাসনামলে জাপানি বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল দেশ এবং একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।’ জাপান সফর শেষে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন অংশীদারত্বের ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন। ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণ নিয়ে ভিত্তিহীন ও কথিত অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। আত্মমর্যাদার প্রশ্নে দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। সৎ, সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করেন পদ্মা সেতু। এ যেন বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে করা অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ। তাই বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারত্বের ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মা সেতুর ছবি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়ার ছবিটি ভিন্ন মাত্রা পায়। রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা যায় বাংলাদেশের মাথা না নোয়ানোর প্রতীক বনে যাওয়া এ ছবিটি। তবে বাংলাদেশকে দেওয়া বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তার অঙ্গীকার এ বছর ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি। এখন বিশ্বব্যাংক মনে করে পৃথিবীর অনেক দেশই দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরকালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, ‘সব বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোলমডেল। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন করেছে। তার গতিশীল নেতৃত্ব কভিড-১৯-এর পরও বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রেখেছে। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুসংযোগ স্থাপন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
একজন দূরদর্শী রাজনীতিক শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছেন তা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে সহজেই অনুমান করা যায়। পাকিস্তানের বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনীতির নানা সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয়। মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। পাঁচ বছর আগেই মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানি আয় পাকিস্তানের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। রিজার্ভ পৌনে ছয়গুণ বেশি। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতিও বাংলাদেশের কয়েকগুণ। পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ হতে চায়। এটিই ক্যারিশম্যাটিক লিডার শেখ হাসিনার অনবদ্য সাফল্য।
স্বাধীনতার পর ৫২ বছরের পথচলায় গত এক যুগে বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। এ সময়ে দেশ পরিচালনা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যার দূরদর্শী রাষ্ট্রপরিচালনায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে রোলমডেল। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি, যার মাথাপিছু জিডিপি তার আঞ্চলিক প্রতিবেশীর চেয়ে অনেক বেশি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৯ বিলিয়ন থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, গড় আয়ু ৪৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছরে এবং সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা-নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রশমনসহ আর্থসামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ একটা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ব নেতৃত্বের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর অত্যন্ত গুরুত্ববহ। এ সফর থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রেরণাদায়ী, অনুসরণীয় বিশ্বনেতা হিসেবে নতুন করে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি পেয়েছেন, আলোচিত হয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে এবং বিশ্বপরিমণ্ডলে তার অনিবার্যতা প্রমাণিত হয়েছে আরেকবার।
লেখক : মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়