যাপিত জীবনে সুন্নত পালন

যাপিত জীবনে সুন্নত পালন

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাধারণ কিছু কাজ থাকে, যেমন খাওয়া, ঘুম, গোসল, রান্নাবান্না, প্রতিবেশীদের সঙ্গে খোশগল্প, গৃহপালিত পশু লালনপালন, বাচ্চাদের দেখভাল ইত্যাদি। এসব আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিত্যকার ঘটনা। যদিও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এ কাজগুলো পার্থিব জীবনের জন্য, কিন্তু আমরা যদি এ কাজগুলোই আল্লাহর হুকুম এবং নবীর তরিকায় করতে পারি, তাহলে এগুলোও আমার পরকালের উপার্জন হিসেবে গণ্য হয়ে যাবে।

প্রথমেই লক্ষ করি খাবারের বিষয়টি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম-সন্তান! তোমরা প্রত্যেক সিজদার স্থলে বা মসজিদে (নামাজের সময়) সৌন্দর্য গ্রহণ করো (পোশাক ও সাজসজ্জা পরিধান করে নাও), খাও এবং পান করো, কিন্তু অপব্যয় কোরো না। তিনি অপব্যয়ীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ : ৩১)। অর্থাৎ আমি যখন রাসুলের তরিকা অনুযায়ী অপব্যয় ছাড়া খাবার গ্রহণ করব, তখন সেটা আমার আমলনামায় ইবাদত বলে গণ্য হবে। দৈনন্দিন জীবনের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ঘুম। এ ঘুমও আমার ইবাদত বলে গণ্য হবে যদি তা আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরিকা মতো হয়। রাতে ঘুমানোর আগে যদি এশার ফরজ নামাজ জামাতে আদায় করি এবং ঘুম থেকে উঠে ফজরের ফরজ জামাতে আদায় করতে পারি, তাহলে রাতের ঘুমও আমার ইবাদত বলে গণ্য হবে। আল্লাহতায়ালা আমার এ ঘুমের ব্যাপ্তিকালটা নফল ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নেবেন। এ ছাড়া দুপুরে একটু শুয়ে বিশ্রাম নেওয়াও সুন্নত। ঘুমানোর আগে বিছানা ঝাড়ু দিয়ে ঘুমানো সুন্নত। ডান কাতে ঘুমানোও সুন্নত। বিজ্ঞানের ভাষায় বামদিকে হৃৎপিণ্ড থাকায় বাম কাতে শুয়ে থাকলে হৃৎপিণ্ডে দেহের অতিরিক্ত চাপ পড়ে। রান্নাবান্না করাও দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম একটি কাজ। সাধারণত বাড়ির স্ত্রীরাই বেশিরভাগ রান্নাবান্নার দিকটি সামলে থাকে। স্ত্রীদের রান্না খেয়ে পরিবারের পুরুষগুলো যতক্ষণ ইবাদতে লিপ্ত থাকবে, ততক্ষণ এ ইবাদতের একটি অংশ সেই স্ত্রীদের আমলনামায় লেখা হতে থাকে। আবার রান্নাবান্না যদি পুরুষ করে, সে খাবার খেয়ে নারী ইবাদত করে, তাহলে সেই পুরুষের আমলনামায়ও সওয়াব লেখা হবে।

আমাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে প্রায়ই অসুস্থ হওয়ার কথা শোনা যায়। আমরা তাদের দেখতে যাই। এ রোগী দেখতে যাওয়াও সুন্নত। হজরত আলি (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা বিকেল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা দোয়া করে।’ (তিরমিজি : ৯৬৭)। এভাবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, তাদের খোঁজখবর নেওয়াও (তিনি অমুসলিম হলেও) আমাদের জীবনযাপনের অন্যতম একটি সাধারণ কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (মুসলিম : ১৮৫)। এ ছাড়াও সন্তানের দেখভাল করা, পশুপাখির প্রতি দয়া দেখানো, মুচকি হাসি দেওয়া, মেসওয়াক করা, পায়খানায় পানি খরচ করা ইত্যাদি স্বাভাবিক কাজ হলে আল্লাহ হুকুম আর নবীর তরিকায় করতে পারলে তাই ইবাদতের অংশ হিসেবে পরকালে নাজাতের উপায় ও উপলক্ষ হবে। কিন্তু তার জন্য আমাদের প্রয়োজন শুধু পরকালের নিয়ত করে কাজটি সম্পাদন করা। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি : ১)। আল্লাহতায়ালা আমাদের পার্থিব বৈধ সব কাজকে কবুল করুক।

মাজহারুল ইসলাম

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com