স্বতন্ত্র সুরক্ষা আইন জরুরি

স্বতন্ত্র সুরক্ষা আইন জরুরি

দেশে ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তবে এই প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একের পর এক ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রায়ই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের বাদানুবাদ, ভাঙচুর এবং উভয়পক্ষে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। তবে ভুল চিকিৎসায় কত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটছে, তা জানার উপায় নেই সাধারণ মানুষের। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।

শনিবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে দেশের সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। প্রতিবেদনে সম্প্রতি একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে এসে রোগী ও তার স্বজনদের করুণ পরিণতির ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সামান্য খতনা করার উদ্দেশ্যে এসেও লাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। প্রসব বেদনা নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক প্রসূতি। নিজের জীবন বাঁচলেও সদ্যো জাত শিশুকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া সম্ভব হয়নি সেই মায়ের। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে স্বাভাবিকভাবে প্রসব করানোর পরামর্শ দেন। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও এটা করতে ব্যর্থ হন। রাত ৮টার দিকে মৃত নবজাতক রেখে সংশ্লিষ্টরা বলেন, আপনাদের একটি মৃত বাচ্চা হয়েছে। এ সময় নবজাতকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখতে পান স্বজনরা। আমরা সবাই জানি, দেশে দক্ষ চিকিৎসকের ঘাটতি যেমন রয়েছে। একই সঙ্গে অভাব রয়েছে দায়িত্বশীল ও পেশার প্রতি দায়বদ্ধ চিকিৎসকের সংখ্যা। পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির মতো মৌলিক অধিকারও এখন চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান বলছে, বৈশ্বিক মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার প্রধান ১০ কারণের অন্যতম অনিরাপদ চিকিৎসাসেবা। প্রতিবছর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ভুল চিকিৎসায় ১ কোটি ৩৪ লাখ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় চিকিৎসার ভুলে রোগীর মৃত্যু হয়। এ ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু কমাতে চিকিৎসকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে রোগী ও চিকিৎসকের নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষায় একটি শক্তিশালী আইন করতে হবে।

দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের কাছে ভুক্তভোগীর অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। তবে সেখানে অভিযোগ জানিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। রোগী, তার স্বজন, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের অধিকার রক্ষায় স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন-২০১৯ নামে একটি আইনের খসড়ার ব্যাপারটি আমরা জানি। তবে তা আজও আলোর মুখ দেখতে পারেনি।

আমরা মনে করি, চিকিৎসায় অবহেলাকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ, একক এবং স্বতন্ত্র আইন জরুরি। কারণ, অনেক সময় চিকিৎসকরাও রোগীর স্বজনদের অন্যায় আক্রমণ ও সহিংসতার শিকার হন। সুতরাং এমন একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন দরকার, যেখানে রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী উভয়ের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকে। আমাদের প্রত্যাশা, চিকিৎসায় অবহেলা প্রতিরোধ এবং রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের আইনি সুরক্ষা দ্রুত নিশ্চিতকল্পে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com