সংকটকালে করণীয় আমল
পৃথিবীতে মানুষকে পাঠানো হয়েছে পরকালের অনন্ত জীবনের প্রস্তুতির জন্য। এখানে মানুষের মূল কাজ মহান আল্লাহকে মান্য করা ও তার নির্দেশিত পথে চলা। আল্লাহ এখানে মানুষকে পদে পদে পরীক্ষা করবেন। যেমন সুরা মুলকের দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।’ তিনি আমাদের কীভাবে পরীক্ষা করবেন? সে বিষয়ে সুরা বাকারার ১৫৫ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফলফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ সুতরাং আমাদের জানা উচিত, বিপদ-মুসিবত এবং মহামারিকালে করণীয় কী?
বিশ্বাস নবায়ন ও দৃঢ় করা : যে কোনো বিপদ-মুসিবত ও মহামারিতে মুমিনের প্রথম কাজ হলো নিজের আকিদা-বিশ্বাস সঠিক ও দৃঢ় করা যে, আল্লাহতায়ালা যদি আমার তাকদিরে লিখে রাখেন, তবে তা কোনোভাবেই প্রতিহত করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালাই আমাকে সুস্থতা দান করবেন, মারা গেলে ‘শহীদ’-এর মর্যাদা তথা বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন। আর যদি আমার তাকদিরে না লিখে থাকেন, তবে আমি কখনো আক্রান্ত হব না।
আমল সংশোধন করা : সুরা রুমে বর্ণিত হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম : ৪১) এবং সুরা হুদে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আপনার রব এমন নন যে, তিনি জনপদগুলো অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন অথচ তার অধিবাসীরা (নিজেদের কর্ম) সংশোধনকারী।’ (সুরা হুদ : ১১৭)। অতএব আমাদের উচিত সব অন্যায় ও অপকর্ম বর্জন করে সৎ ও সঠিক কাজে লিপ্ত থাকা।
বেশি বেশি ইস্তেগফার করা : আল্লাহর কাছে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী!) আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদের শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে, তারা ইস্তেগফারে রত অবস্থায় তাদের শাস্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল : ৩৩)। সুতরাং আমরা যদি আমাদের কৃত অপরাধের কারণে আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি তাহলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন এবং সব বিপদ-মুসিবত ও মহামারি আমাদের থেকে দূর করে দেবেন।
ফজিলতপূর্ণ সুরা পাঠ করা : দিনে যে কোনো সময় সুরা ফাতেহা তিনবার, সুরা ইখলাস তিনবার এবং সুরা আলে ইমরানের এ আয়াত ৩১৩ বার পড়া—‘আল্লাহতায়ালাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি অতি উত্তম অভিভাবক।’ (সুরা আলে ইমরান ১৭৩)। আমরা যদি এ কাজগুলো করতে পারি আশা করা যায়, আল্লাহতায়ালা আমাদের থেকে সব বিপদ-মসিবত দূর করে দেবেন এবং আমাদের সুস্থ, সুন্দর ও প্রাণবন্ত একটি পৃথিবী উপহার দেবেন।
l মুহাম্মদ নুরুল হুদা