জামায়াতের ‘গোপন বৈঠকে’ সরকারি কর্মকর্তা : ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক

জামায়াতের ‘গোপন বৈঠকে’ সরকারি কর্মকর্তা : ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক

সরকারি কর্মকর্তা হয়ে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক দলের এক গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন দুই সরকারি কর্মকর্তা। রাজধানীর মিরপুরে শনিবার একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে এ ‘গোপন বৈঠক’ হয়। বৈঠক চলাকালে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের ৫৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন আবু মাসুম সিদ্দিকী ও আব্দুল্লাহ আল ফাহিম নামে দুই সরকারি কর্মকর্তা। তাদের একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপক; যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ক্যাশ বিভাগে কর্মরত। অন্যজন সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) প্রকল্পের কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের চৌগাছায়। আব্দুল্লাহ আল ফাহিমের বাবা গোলাম মোর্শেদ চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির। ওই বৈঠক থেকে আব্দুল আজিজ ফারুকী নামে এক ফটোসাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের ফটোসাংবাদিক হিসেবে কর্মরত। বৈঠকস্থল থেকে আটটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনাই ছিল বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য।

এর আগেও দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের এমন একাধিক ঘটনার কথা আমরা জানি। ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বরের কথা। বৃহস্পতিবারের রাত। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের চাকরিচ্যুত কর্মচারী মো. তোহা গ্রুপের ১৫-১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যান। তাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেই ঘটনা তখন সারা দেশে রাজনীতির মাঠে তোলপাড় ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। তখনো শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গভীর রাতে বৈঠকটি হয়। যেখানে অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আরেকটি ঘটনা ওয়ান-ইলেভেনেরও আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। অর্থাৎ ২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বরের কথা। এটি ছিল কিছুসংখ্যক আমলার যড়যন্ত্রমূলক উদ্যোগ। রাজধানীর উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে গোপন বৈঠকটি হয়। ওই বৈঠকটি দেশের রাজনীতিতে ‘উত্তরা ষড়যন্ত্র’ নামে পরিচিত। ওই বৈঠকটি বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। তখন নির্বাচনকে সামনে রেখে আমলাদের এ ধরনের বৈঠককে যড়যন্ত্র এবং আবারও চারদলীয় জোটকে ক্ষমতায় বসানোর নীলনকশা হিসেবে অভিহিত করেন তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ সুশীল সমাজের লোকজন। গোপন ও ষড়যন্ত্রমূলক সেই বৈঠকে সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা সেদিন উপস্থিত ছিলেন। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক চলার পর তারা খবর পান বাড়ির বাইরে সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অপেক্ষা করছে। এরপর বৈঠক শেষ না করেই কর্মকর্তারা কেউ পালিয়ে, কেউ মুখ লুকিয়ে চলে যান।

আমরা মনে করি, সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক দলের বৈঠকে অংশগ্রহণ বাংলাদেশ সরকারের চাকরিবিধি লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সঙ্গে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি হুমকি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। আমরা চাই, তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

Related Stories

No stories found.
logo
kalbela.com